Friday, April 10, 2015

সম্পাদকীয়




আজকের পরিস্থিতিটা ঠিক দশ বছর আগে ২০০৫ এর জানুয়ারির সেই দিনটার মতো যেদিন অলিন্দ'র প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। সেদিন আমরা সঠিক ভাবে জানতাম না যে একটা লিটল ম্যাগকে আসলে খায় না মাথায় দেয়? জানতাম না তার সঠিক শারীরিক গঠন এমনকি সঠিক প্রয়জনীয়তাও। ঠিক একই ভাবে আজ এই ব্লগজিনের প্রথম সংখ্যা প্রকাশের মুহূর্তে আমার জানা নেই একটি সুন্দর ব্লগ তৈরী করার নিয়ম কানুন, যেমন জানা নেই এত ভালো ভালো চলতি ব্লগ থাকতেও আমাদের এই ব্লগের প্রয়জনীয়তা? তবুও আমি প্রকাশ করলাম এই ব্লগ তারও একমাত্র কারন আমি। এতদিন ধরে বহু চেষ্টা করেও বছরে একটির বেশি অলিন্দ'র সংখ্যা প্রকাশ করতে পারছিলাম না। কিন্তু প্রতি মুহূর্তেই চাইছিলাম আরও কয়েকটি সংখ্যা করতে, আরও অনেককে লেখার সুযোগ করে দিতে, অলিন্দ'র পাঠক সংখ্যা আরও বাড়াতে। আর তাই নানান দিক বিচার করে আমায় এই ব্লগজিনকেই বেছে নিতে হল। বছরে প্রিন্টেড ভার্সানে অলিন্দ'র একটি সংখ্যা যেমন প্রকাশিত হচ্ছিল তেমনটাই থাকবে তার সাথে এখন থেকে বছরে আরও কয়েকটি সংখ্যা প্রকাশিত হবে এই ব্লগিজন আকারে।

প্রথম প্রস্তুতি সংখ্যার বিষয় হিসবে আমরা বেছে নিলাম কবিতাকে। তার প্রথম কারন হিসেবে বলা যায় যে শুধু কবিতা নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে আমাদের অনেকদিনের আর তাই ব্লগজিনের শুরুতেই আমরা সেই সুযোগটাকে কাজে লাগাতে চাইলাম। যদিও এই সংখ্যাটি একটি কমপ্লিট কবিতা সংখ্যা হিসেবে আমাদের আত্মতুষ্ট করেছে এমনটা মোটেও নয়। আমাদের অনেক অজ্ঞতা, তাড়াহুড়ো ও অন্যান্য কিছু কারনে সংখ্যাটির পুর্নাঙ্গ বিস্তৃতি সম্ভব হল না। পরবর্তীতে আমরা কবিতা নিয়ে কাজ করে যাব ক্রমাগত ব্যবধানে, এবং আপনারা আমাদের পাশে থাকবেন এই আশা, আশা করি রাখতে পারি? আপাতত আপনার প্রবেশ ঘটুক আমাদের প্রথম সংখ্যায় এবং দয়া করে আপনার মূল্যবান মতামত দিয়ে সাহায্য করুন লেখক ও সম্পাদককে। ধন্যবাদ।

                                                                                                                        
                                                                                                                             সুপ্রিয় সাহা

সায়ন্তন সাহা


১.

লাল নীল হলুদের মেলা বসত
আমাদের সেইসব দিনগুলোতে
স্কুলের ব্যাগটা রেখেই, দে ছুট
হেডলি বলের দাম সাতাশ টাকা
খেলতে খেলতে বল চলে যেত মাঠের বাইরে
সেদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে
একটা বল খুঁজে আনতে গেছিল
আমাদের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো ছেলেটা
অসতর্ক শামুকের খোলায় ভুল করে পা
তির্যক স্তব্ধতা ফেলে রেখে চলে যায় সীমান্তের ট্রেন
তাঁর ধাতব শরীর জুড়ে কাঁদে, সবুজ মফস্বল


২.

কপালে দাগ নেই, শরীরে ক্ষত নেই এমন একটা দিনে, কি এমন হল
আমাদের মত অনেকের প্রশ্ন ছিল এটাই
কারণ থেকে ভেতর
তারও ভেতরের খবরে পেকে ওঠে কান
আমাদের মত অনেকের প্রশ্ন ছিল এরপর


মৃত ট্রেনের নীচে শুয়ে থাকে ভীত কবি, তিনহাজার বছর

সুতপা, ভালোবাসা আসলে ব্যকরনহীন


৩.

অনেক টাকা মার্কেটে ধার
নিজের কাছে দম দেওয়া ঘড়িটা ছুঁড়ে ফেলে
লোকটা শুয়ে পড়লো মাটিতে মুখ গুজে
বাড়ির সামনে পড়ে আছে ছিন্ন লোকের মাথা
দোতালার ড্রয়ারে চিরকুট...

কথা শোনানোর জন্য
এখন আর কেউ আসে না

ধর্মের টাকায় সুখে থাকে পরিবার


৪.

রেল লাইনের পাশে, একা একা মরে যায় মানুষ
কখনও না বুঝে, কখনও স্বেচ্ছা
লোকজন দলবেঁধে আসে, দেখে, আবার চলেও যায়
আলোচনা চলে, দিন কয়েক

রক্তের কোন দাগ থাকে না
বিকেলের 'শান্তিপুর' সবেমাত্র চলে গেছে

...মানুষের অপঘাতে ইতস্তত চুমু খায়, নিরীহ মাছি!


৫.

শীতের সকাল, আমাদের ঘুম তখনও ভাঙে নি
কিন্তু আগের রাতেই জমে উঠেছে বারুদ
জুটমিল বন্ধ, ভাত নেই
বুলি পিসি আগেও বার কয়েক এমন করেছিল
মা কে বলতে শুনেছি এসব সময় ভূতে পায়
একে কল্যাণী সীমান্ত, ডাউনে থ্রু
একদিকে মানুষ অন্যদিকে মানুষ আর তাঁর মাঝখানে জীবন
...সেদিন মানুষ জিতেছিল


৬.

প্রতিটা লেখাই শেষ অবধি রেললাইন হয়ে চলে গেছে ডানদিকে
কারশেড গামী ক্লান্ত ট্রেনে ঘুমিয়ে পড়েছি, সকালের অপেক্ষায়
অনেক দানের পর যেখানে চোখ খুললেও অন্ধকার
সেই অন্ধাকারে জন্মায় মৃত্যু, বেঁচে থাকার ইচ্ছে গুলো তোমা্র 
থেকে ধার নিয়েছি
আমি ফিরে আসবই

অয়ন ঘোষ

প্রণিধান..!


হলো
লুণ্ঠিত
বারবার।
প্রেমিকা নাকি
ইজ্জত খোঁজে না?
অভিকর্ষর টানে
শরীর নীচে,ওপরে....
বিন্ধ পর্বতের চূড়ার
থেকে গড়িয়ে আসলো ঘাম।
এপার থেকে উঠলো পতাকা
দেবচরিত্রের মুখোশের মতো।
তার ওপারে কবিতার রোগা মাথা
ধবলীর মতো তৃনভোজী সেজে বলে,
বঙ্গললনা, উত্তর কই ? থিতিয়ে গ্যাছে ?



আগুন নেমে আসুক...

স্বপ্নের রঙ বাদামি চিরকাল
ফিকে অর্থাৎ, দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া
সাধারণ মানে স্বল্পমেয়াদি যত
জীবন-যাপন বরাবরই ভাত,ডাল।

উষ্ণ রোদের তবুও পন্থা আছে
যুবতী মেয়ের গোলাপী গোলাপী আভা
লজ্জা ভাঙ্গিয়ে জাপটে ধরি বিকেল
সন্ধ্যে নামলে শেষ বলে চলে যাওয়া।

মাঝবয়সী যুবকের গোঁফ,দাঁড়ি
প্রশ্ন করে পকেটের প্রিয় ক্ষত
আকাশের দিকে তাকিয়ে উত্তর খুঁজে
প্রেমে পড়ে যাই প্রথম দিনের মতো।

বৃষ্টি যদি প্রেমের শরীক হয়
গদগদ প্রেম আকাশে,বাতাসে ভাসুক
বৃষ্টির পর লেলিহান শিখা জ্বালিয়ে
আমার জন্যে আগুন নেমে আসুক।

রাণা বসু



স্বাধীনতা 

দাঁড়াতে না পারলে মাথা উঁচু হয় না বলে
আমি পা থেকেই শুরু করি
অঙ্ক কষে কষে শক্ত মাটির ওপর থেকে
খুঁজে ফিরি রক্তজবা

এক একটা ফিনকি থেকে
ছুটে আসে রাত
ছুটে আসে ঝর্ণা

অতি দ্রুত মিলিয়ে যায়
সব আলো পাথর দেহাতী বাতাস
ফিরতি পথে আমি তোমায়
পূর্ণ স্বাধীনতা দেব।। 

রাতগুলো পাশ কাটিয়ে যায়


রাতগুলো পাশ কাটিয়ে যায়
আমি আমার চর্যাপদ হাতড়ে
খুঁজে ফিরি স্বপ্নের রঙমহল
এদিকে ফিরে তাকিয়ো না
শ্যাওলায় চারপাশ অন্ধকার
রিষা আমায় জল দাও
সারা শরীর বিষিয়ে আছে আমার
ছুঁয়ে দিলেই সেরিব্রাল অ্যাটাক
ভিড় ঠেলে বেরিয়ে আসতে
আরো কয়েক যোজন
ফিরে আসতে আমায়
সারাজীবন পাশ ফিরে থাকতে হবে।।

সরোজ দরবার



 হিট উইকেট


বিশ্ববাংলার পথ ধরে চলিতেছি এই চল্লিশ মিনিট,
সপ্তাহভর, মাস অন্তে মাস, বছর বছর-
দেখি প্রতি বসন্তে ফুল আসে, বাইপাসে, একদা-
এখন অন্য নামের পথ, তবু ফুল একই রঙের;
একই ভুল করে রোজ লোকে, শুধোয়, ‘হোথায় যাবে’?
একইরকম বিরক্ত কন্ডাক্টররা বলে - ‘সব লেখা আছে’,
খিটখিটে তেমনই এক রিটায়ার করে গেছে দিনকয় হ’ল,
জানি এই সব, যখন লোকাল আমি, তবু আন্তর্জাতিক
সীমানা আমার, জানি, যত বাঁচি, যত পথ হাঁটি-
জানি, আর্জেন্তিনার রাজধানী, ব্রাজিলের দারিদ্র ও যৌনতা,
অস্কারের সিনেমা, আত্মার অস্তিত্ব নিয়ে নতুন গবেষণা;
পুরুষেরা কী ভুল করে প্রণয়ে, বেদনায় নারীর অধিক
কষ্ট পায় কি না-এতকিছু ভাবি আমি কাহিনি-কবিতায়,
যখন ফেরার পথ মেশা অন্ধকারে, দূরে দূরে ওই জ্বলে
স্ট্রিট লাইট, কারা থাকে তার নীচে ভাবি না আমি,
আমার মননে জাদু ও বাস্তবের হিল্লোল, ম্যাজিকনগরীর
বাসিন্দা আমি যেন, হেথা বিশ্ব এসে মিশেছে রক্তকণিকায়,
শহরও কেমন প্রসারিত পূবে ও পশ্চিমে, কত বড়
হচ্ছে পড়শি সীমানা...এলিটে-গলিতে মাখামাখি,
কী চমৎকার মেট্রোপলিটন হাওয়া লাগে জামায়;

বিশ্ববাংলার পথ ধরে চলিতেছি এই চল্লিশ মিনিট,
অনেক জেনেছি আমি নারী ও নাড়িনক্ষত্র এই দুনিয়ার,


যতই না-জানা থাক ডিমাপুর-দিল্লি-কামদুনি-সাত্তোর,
তরুণ নগর আমি, উদ্ধত গোপনে, জানার উর্ধসীমায়-

জেনো ভেঙে যাবো, তবু মচকানো কিন্তু যাবে না আমায়।





শট এনজি(২)

আমাদের কথা প্রতিশ্রুতিরা কেন শুনবে
আমাদের কথা কেন বুঝবে তোলাবাজ
আমাদের কথা ভাববে কেন কমরেড
আমাদের কথা লিখবে কেন লেখকগোষ্ঠি
আমাদের কথা মাথায় রাখবে কেন বাজেট
আমাদের কথা কেন তুলবে অধিবেশন
আমাদের কথা জানবে কেন বিদেশনীতি
আমাদের কথা কেন মানবে ধর্মঘটি
আমাদের কথা কেন মানবে যে ধর্ষক
আমাদের কথা কেন শুনবে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ


‘আমাদের কথা’ এরকমই বেয়াড়া পেরেক,
বেঁকেচুরে দেওয়ালে গেঁথে থাকা লজ্জা


একবার ওদের বাদ দাও, দেখবে
ক্ষমতার অলিন্দে কী চমৎকার অন্দরসজ্জা।

তৈমুর খান


বয়স বাড়েনি


বয়স বেড়েছে এত তবু মনে হয় বয়স বাড়েনি
সেই বটবৃক্ষের ছায়ায় দাঁড়িয়ে আছ
মৌসুমি বাতাস আসছে
মাছরাঙা নামছে অতর্কিতে
এখনও ঘাড়ের রোমগুলি বাতাস নেড়ে দেয়
চুল এলোমেলো
ঝাপসা দৃষ্টিও উচ্ছল সতত
ঢিল ছুঁড়ে দিই
অনুভূতির বেগ তরবারি বানায়
যুগ ও সময় কেটে কেটে
মানবিক সূর্যের প্রতীক্ষা তার

নৌকাটি কোথায় যায় ?
আমিও যেতে চাই নদীর সঙ্গমে
বালিতে পায়ের চিহ্ন

উদ্দাম কৈশোর ছুটে যায়


এ সময় যুদ্ধ চলছে


দুপুর শুয়ে আছে গাছের ছায়ায়
হিংস্ররা ঘ্রাণ পাচ্ছে রক্তের

এসময় যুদ্ধ চলছে
ক্লান্তিহীন

পোষা মৃত্যুরা সাহসী হয়ে উঠছে ক্রমশ
দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঠে আমরাও তরবারি বয়ে আনছি
বিশ্বাসহীনতায় ভ্রষ্ট হয়ে উঠছি বারবার

Thursday, April 9, 2015

সনৎ মাইতি

জল

ডুবে ডুবে জল সাঁতরাই না আর।
ডারউইন সাহেব অনেক নির্বাচন গড়িয়ে গেছেন ।
এখন আকাশে ওড়া পালক শরীর....
উড়ে তো এলাম
তবুও মুক্তি দিলে কোথায় ?
কোষে কোষে রক্তের প্রতি ফোঁটায়
আজও
 আজও জল বয়ে বেড়াই তোমায়....

অভি মৈত্র



দেবী

কিছু নাগরিক মেঘ
এখনো খুঁজছে তোমার বাড়ির পথ
ত্রিসীমানায় যার থমকেছে সময়,

হঠাত্‍ মধ্যরাত
খুলে গেলে পাতালের প্রাচীন গহ্বর
সন্তর্পণের মিশমিশে ছায়ায় কখন উঁকি রেখে যায়
স্বর্গ-মর্ত্য-পাতাল যোগাযোগ রক্ষাকারী বটবৃক্ষের অভিজ্ঞান,
কেউ জানে কী !!

আরো দূরে মেলা ভাঙার মাঠ
বাউলদের সম্মিলিত গান-
বোধহয় গাইছে "ঘরে ফেরার গান"
শ্বশানেও কি যেন উত্‍সব-
আসছে লাশের পর লাশ
চুল্লির প্রবল দহন,

প্রাত্যহিক অনুসন্ধানে শরীরপ্রিয়
নাগরিকত্বের অধিকারি যে সব মেঘ
কখনো যায়নি তোমার বাড়ির পথ
আর পাবেনা তোমার অচিন মন
বর্ষনেই রেখেছে সব অভিশাপ
ফেলে গেছে কিছু প্রতীকি অহঙ্কার,

যেভাবে মাটির পর মাটি
প্রলেপ পর প্রলেপ ....
আজ সেভাবে ক্ষতের পর ক্ষতে
সমাজ তোমায় দেবী বানিয়েছে
সাথে আমিও...

তুমি মানবী হলে কই?

শঙ্খদীপ কর


মানুষ-২

অনেকগুলো ঘর নিয়ে তৈরি গাছটা
হঠাৎ হাঁটতে শুরু করলো।

 রাস্তার পায়ে পায়ে দরজা।
 কোনওটা খোলা
কোনওটা ভীষণভাবে খোলা
অথচ চৌকাঠ পেরোনো যাচ্ছেনা।

চাঁদ নেমে আসছে কোথাও,
বুকের কার্নিশে বসে
লাটাই-এ গুটিয়ে নিচ্ছে রাস্তা।

শিকড় কাঁধে নিয়ে
নিজের থেকে অনেক বড় গাছটা
অনতিক্রম্য এক ক্রমশ হয়ে উঠছে।

সেলিম মণ্ডল





এভাবে কলম থামবে? কেউ কি পেরেছে থামাতে? তাহলে আবার এই অপচেষ্টা কেন? দেশ শব্দটা মাঝেমাঝে যখন একটা জাতিকে গ্রাস করে তখন মনে হয় চিংড়ি কেন মাছ নয়? আর মানুষ কেনই বা চিংড়ি নয়। পাখনা নিয়ে কি খুব গভীরে যাওয়া যায়? যদি কেউ এই আদিমতম বিশ্বাস নিয়ে বিশ্ব ইতিহাস বদলাতে চায়, তার জন্যে আমাদের থুতুর সেতু অস্ত্র হোক।

শর্মিষ্ঠা ঘোষ

বোতাম কিস্যা

আমার শহরে ব্যাপক বৃষ্টি আজ
তোর বোতাম ঘরের উষ্ণতাটুকু চাই
উইলস বাটের নিভু নিভু আঁচ দেহে
তোর ভাইটাল জোশরোদ্দুর জ্বালা

শহরে বৃষ্টি একান্ত দরকারি
ধুম জ্বোরো ভাপে লাল চোখ ঝামাপোড়া
আমার শরীর ইবলিশ উচ্ছ্বাসে
বোতাম ছেঁড়ার নতুন বাহানা খুঁজছে

সিক্স প্যাক অ্যাবে দুরন্ত লোভী কাম
নারসিসাসের মস্ত এডিশান তুই
থাকছেনা আর কেতা দুরস্ত ভাঁজ
আদরে আদরে বোতাম হারাবো তোর

দ্বিধাগ্রস্ত বসে থাক ভীরু পার
আমার চাওয়ারা কাবু বেপরোয়া ঝড়ে
উদ্ধার কর আদর জনিত অসুখে
তোর বোতাম ছিন্ন উদোম বোতাম ছোঁব

জয়া চৌধুরী


 যতবার যাই চৌকাঠ পেরিয়ে


যতবার যাই চৌকাঠ পেরিয়ে
পথঘাট চৌমাথার মোড়
অকাদেমীর সামনের নিয়ন আলো
আইসিসিআর-এর পরিপাটি ধাতব হলঘর প্রান্তর
ততবার ফিরতে চাই ঘরে।
যতবার রঙ মাখি মুখে
বুকের ভাঁজে পড়ে নিয়ে চরিত্রের রঙিন বাসী সংলাপ
সদনের মখমল আসনে বসে থাকতে থাকতে
মন ছুটে যায় মহাকাশে তোমার অমৃত সদনে।
কথা ছিল নীল ঘুড়ি উড়িয়ে দিয়ে পাখি হয়ে যাব
বলেছিলে তোমার রীতি অন্যরকম বড় দীর্ঘ সাঁতার জানো।
অদ্য বৈকাল চার ঘটিকায় কোথায় তুমি রইলে...

মগ্ন, হারাবেই যদি এজীবনে কেনই বা তুমি এলে?

রাজেশ চট্টোপাধ্যায়


প্রতিচ্ছবি


অবাক ।
পাতা থেকে টপটপ লবন, জলে ধোয়া
ব্রণ গলে গেলে রক্ত মুখ ।
মেসেজে ইনবক্স – কালো আবছায়া
দৃষ্টিতে চশমা নেই । শব্দহীন প্রেম শুনি
ব্যস্ততার অবুঝ শব্দলিপি ।

টুকরো কিছু ধোঁয়া স্বাদের কোণে গোলাপি।
অজস্র গতিহীন । নিস্পলক ধুঁকছে – শুধুই খোঁজ ।
আয়নাটা আসলে আমি এঁকেছে ।



কাগুজে সংখ্যা থেকে - অমিত রানা'র কবিতা



[কাগুজে সংখ্যা থেকে’ বিভাগে মূলত আমরা রাখতে চাইছি অলিন্দ’র প্রকাশিত প্রিন্টেড সংখ্যাগুলো থেকে আমাদের ভালো লাগা এক বা একাধিক জনের কিছু লেখা। বর্তমান সংখ্যায় আমরা রাখলাম অলিন্দ’র বিভিন্ন সংখ্যায় প্রকাশিত অমিত রানা’র কয়েকটি কবিতা। প্রসঙ্গক্রমে জানিয়ে রাখি অলিন্দ’র প্রথম ছ’বছরের সম্পাদনার দায়িত্ব সামলেছেন অমিত রানা।]



জন্ম বৃত্তান্ত

কিছু জন্ম অবাস্তব, কিছু জন্ম
শাড়ীর মতো সুন্দর।
মাটির ভিতর ঢুকে যাওয়া মুখ
বইমেলা প্রেম,
ঠোঁট চুমু তারিখ
এবং
নিছক একটা সংকল্প
সবটাই জন্ম বৃত্তান্ত।

(নভেম্বর ২০১০)




সংসার

একদিন সম্পর্কটা পুকুর হয়ে উঠবে
ঝোপ জঞ্জাল, আস্তাকুড়
গায়ে মেখে নেমে যাব জলে
কানের পাশে গজিয়ে উঠবে
সংসার
এদিক থেকে সেদিক ছড়িয়ে
থাকবে রান্নাঘর
থাকবে সম্বোধনের আগুন
থাকবে খাবার
থাকবে পেট ভরে খাইয়ে দেবার লোক।

(নভেম্বর ২০১০)



রসগোল্লা

আগবাড়িয়ে সবকিছু বলতে নেই
প্রথম দেখাতে না বললে
চটজলদি বোঝাতে নেই
ফাটাফাটি ভালবাসা ছিল মনে
সময় ফল মিষ্টান্ন হলে
দেখাতে নেই
তিনশো দুই সুগার
ঝাক্কাস শিল্পী না হয়ে
খুলতে নেই দশ বিশটা শিল্পায়ন।

(জানুয়ারি ২০০৯)




ডাকনাম


যদি ফিরে আসতে পারিস
তবে অনেকটা জায়গা দেব
কুয়াশা মাখা চাদরের নীচে,

খড়কুটো আর চাদর দিয়ে
বানিয়ে দেব আস্ত একটা পাতার ঘর।

কৃত্রিম ফুসফুস, লালচে দেওয়াল
আর কাগজের ঈশ্বর
সবাই ঠাসাঠাসি করবে
এক ছাদের তলায়।

যদি ফিরে আসতে পারিস
তবে চাদরের নীচে থাকবে যাদুকরের শহ
কবির রক্ত দিয়ে দেওয়ালে লেখা থাকবে
বিপ্লবের ডাকনাম।

(জানুয়ারি ২০১৩)



বন্ধুত্ব ১০


মৃত সব বন্ধুত্ব চলে গেছে অনেক দূরে
যেখান থেকে পিছন ফিরে তাকালেও
ভূপৃষ্ঠে দেখা যায় না কোন বন্ধুত্বের ছাপ।
নতুন কিছু বন্ধুত্ব উঠে আসে চিলেকোঠায়
জানালার ভাঁজ খুলে বেনুনী চুল মেতে ওঠে
প্রশ্ন প্রশ্ন খেলায়
আর তক্ষুনি বাইরের ঘরে
লুটোপুটি খায় রোদ
গাছেদের ছায়া ছড়িয়ে পড়ে
বন্ধুত্বের চাদরে।

(জানুয়ারি ২০১০)

ফিরে পড়া - মৃন্ময় ভৌমিক-এর “হ্যাঁ কিংবা না”



[মৃন্ময় ভৌমিক-এর কাব্যগ্রন্থ “হ্যাঁ কিংবা না” প্রকাশিত হয় কলকাতা বইমেলা ২০০৯ এ। মৃন্ময়ের সেই তিন ফর্মার কাব্যগ্রন্থ থেকে আমাদের ভালো লাগা কিছু কবিতা প্রকাশ করা হলো এই ‘ফিরে পড়া’ বিভাগে শুধুমাত্র এই উদ্দেশ্যে যে কবিতাগুলি আরও বৃহত্তর পাঠক সমাজের কাছে পৌঁছবে এবং বিভিন্ন পাঠ প্রতিক্রিয়া কবিকে ঋদ্ধ করবে]



হ্যাঁ

ঈশ্বরকে ছুঁড়ে মারা আমার সমস্ত ইট পাটকেল
আজ গ্রহ হয়ে ঘুরে বেড়ায় রাতের বেলা
জানি কিচ্ছু নেই
কিছুই থাকে না আজীবন মনে
আমি তাও টুকরো হয়ে যাই
অন্ধকারে-তোমার চুম্বনে...



হিংসা

আমি তোমার সামনে যাওয়ার আগেই
ফ্লাইওভার গিয়ে দাঁড়ায় ।
কারণ-
শহরে যত জায়গায় তিনি আছেন
তত জায়গায় আমি নেই।

তোমার জন্য রাস্তার পাশে দাঁড়ালেই
ভ্যাপার জ্বলে ওঠে।
কারণ-
একটা ল্যাম্প পোষ্ট যত দাঁড়াতে পারে
আমি পারি না।

আমি তোমাকে কাছে পেতে গেলেই
হাতের কাছে আসে
বাজার, হসপিটাল, এমনকি রেলের লাইন


তুমি শুধু দূরে চলে যাও
কাটা পড়ে এক একটা দিন।



আব্দার

বলো, কাল সকালেই তুমি বেড়াল করে দেবে আমাকে
দুধ মাছ খাওয়াবে
বলো, দুপুরে করে দেবে কুকুর
আমি ফ্রিজের তলায় ঘুমোতে ঘুমোতে রাত হয়ে গেলে
শোওয়ার আগে করে দেবে বাঘ
বিছানায় করে দেবে জঙ্গল
তারপর-হালুম হালুম করলেও
আঁচড়ে কামড়ে দিলেও
এমনকি তোমাকে খেতে চাইলেও
বলো, কোনোদিন ইঁদুর করে দেবে না!



নায়ক

ঐ লোকটাকে একদম মানায় না তোর পাশে
জাস্ট একটা চান্স দিয়ে দ্যাখ
দ্যাখ কতটা পারফেক্ট হতে পারি...

সবাই গিফট পাঠাবে মেসেজ পাঠাবে
যারা টিটকিরি দিত তারাও বলবে জিও

আমি কাউকে পাত্তা না দিয়ে
একটা রিক্সা ডেকে তোকে নিয়ে উঠে পড়ব
কোন ঠিকানা নয়
শুধু বলবো
চালাও...



প্রিয় বান্ধবী টুয়া

এই রকম অনেক ঘটনা
দূরপাল্লার বাস ধরে চলে যায়।

এইরকম অনেক
অটোরিকশার মত মানুষ
চলে আসে কাছে।

এইরকম অনেক শরীরে
আমি উঠে গেছি সাড়ে দশটায়
হ্যাঁ হ্যাঁ অনেকটা এইরকম দেখতে
আমার বান্ধবী টুয়া।


ফুলশয্যা

পিঠের মধ্যে টুকরো হচ্ছে ঢেউ
চুলের মধ্যে আটকে যাচ্ছে কাদা
পৃথিবীর সব রাত্রির রং এক
শরীর শুধু শরীর দিয়ে বাঁধা

চাঁদ উঠেছে ফুল ফুটেছে ঠিক
এখন শুধু তারা খসার ভয়
আজকে রাতে চৌরাশিয়ার হার
আজকে রাতে বিসমিল্লার জয়