হ্যাঁ কিংবা না, তাতে
আসে যায়!
সায়ন্তনী নাগ
জীবন কিছু ধনাত্মক ঋণাত্মক অনুভূতির সমাহার...তার
কোনটা আশাব্যাঞ্জক আর কোনটা নিরাশার, অনেক সময়েই গুলিয়ে যায়, কারণ হ্যাঁ আর না
মাঝে মাঝেই ওভারল্যাপ করে থাকে এ ওকে। মৃন্ময় ভৌমিকের কবিতার বই ‘হ্যাঁ কিংবা না’
পড়তে গিয়ে সেটাই মনে হলো। যদিও কবি তার নিজস্ব কিছু ভাবনা থেকে হ্যাঁ আর না – এই
দুই ভাগে ভাগ করেছেন কবিতাগুলোকে, কিন্তু পাঠকের কাছে তাদের মূল সুরটি এক...জীবন,
যে জীবন ছড়িয়ে আছে শহরের উন্নয়ন নামের ভেপার ল্যাম্পে, শেষ ট্রামে, হেলমেটহীন
বাইকে, ফ্লাইওভারে, দেওয়ালে লটকানো পুরোনো ক্যালেন্ডারে, প্রেমে ও অপ্রেমে। সে
জীবনই লিখিয়ে নেয়
‘উত্তাল ঢেউ আর ঘূর্ণির মাঝখানে
তুমি যাকে আঁকড়ে ধরতে চাইছো
সে আসলে জল ছাড়া আর কেউ নয়।’
এ হয়তো আমাদের অজানা নয়। তবু আমরা আঁকড়ে ধরতে চাই
সেই খড়কুটো। ‘জ্যাম-ঝঞ্ঝাট-চেনা কোলাহল’ –এ অপেক্ষার পল গুণতে গুণতে এক নিঃশ্বাসে
পড়ে ফেলি মৃন্ময়ের ঝকঝকে নাগরিক উচ্চারণ, যা ভীষণভাবে একালের, ভীষণভাবে তরুণ।
আধুনিক সময়কে কবি চিনেছেন কেবল ‘লোকাল ট্রেনে অফিস ফেরত ক্লান্ত জুতোগুলোর দিকে
তাকিয়ে’ বা ‘পেটের মধ্যে সাহসী পেট্রোল’ ভরে’ ছোটা বাহনে নয়। তিনি টের পেয়েছেন
‘রাতের কোনো ডিম্যান্ড নেই
বাড়তে থাকে দিনের বাজারদর
তোমার হাতে গুগলটকের প্রেম
আমার হাত কবিতা নির্ভর’
কবিতা নির্ভর হাতটুকু আছে বলেই
এড়িয়ে যাওয়া যায় ব্যকরণগত ত্রুটী, ছন্দের বিচ্যূতি, অগ্রাহ্য করা যায় শব্দের
প্রয়োগগত সীমাবদ্ধতা। সংক্ষিপ্ত কবিতার মধ্যেও দু-এক লাইনের চমক দেওয়ার প্রবণতা
নজরে আসে, কিন্তু তার আপাত চাকচিক্যতার আড়ালে যে বোধ আছে, তাকে শুধু কবির নিজস্ব
বিশ্বাসজাত আপ্তবাক্য বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর তাই তা পাঠকের কাছে সহজে পৌঁছয়। পড়ে
ভালো লাগে
‘কয়েকটা দিন বেঁচেবর্তে থাকার
সব সুযোগই কালচে ফিতেয় বাঁধা’
একটি দীর্ঘ কবিতা (‘ফুলশয্যা’)
ছাড়া আর প্রায় সবকটিতেই মৃন্ময় মিতবাক। বিশ্বাস করেছেন সংক্ষিপ্ততাই সৌন্দর্য।
বন্ধ কারখানাকে ‘চুল দাড়িওয়ালা রাস্তা জুড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটা মানুষ’ মনে হয়, যে
কবির তার আর শব্দ বাহুল্য কি প্রয়োজন! দু একটি কবিতায় হঠাৎ কিছু প্রাচীণতার গন্ধ
লাগে (যেমন ‘বর্ষাবরণ’)। কবি যখন নিজেও বোঝেন ‘...অনেক কথা/ আমাদের ভেতরে খুচরো
পয়সার মত জমা হয়/ তারপর একদিন মানে কোনো একদিন/ ঐ পয়সার আর চল থাকে না...’ ফলে অচল
শব্দ বা ভাব ব্যবহারে আরেকটু সতর্কতা দরকার।
ছোট এবং প্রায় মুদ্রণ ত্রুটিহীন
বইটিতে কোনো কবি পরিচিতি নেই, ফলে জানতে পারি না, এটি কবির প্রথম বই কিনা। তবু
তিনি এই দশকের কবি আন্দাজ করে নিয়েই আশান্বিত হই, ভবিষ্যতে প্রয়োগগত বিচ্যূতি
শুধরে তিনি আরো নতুন উচ্চারণে মুগ্ধ করবেন। বন্ধুর সাথে কথা হয়নি বলে যে কবি
মৃত্যুর দিন একটু পিছিয়ে দিতে পারেন (‘বন্ধু’) তাঁর কাছে এটুকু দাবী রাখাই যায়।
হ্যাঁ কিংবা না / মৃন্ময় ভৌমিক / পত্রলেখা
যোগাযোগ : ৯৪৩৪৩৪২৫৫৩
হ্যাঁ কিংবা না / মৃন্ময় ভৌমিক / পত্রলেখা
যোগাযোগ : ৯৪৩৪৩৪২৫৫৩
No comments:
Post a Comment