কবিতার অন্দরমহলের রাস্তা…
অয়ন ঘোষ
'পাখিরালা' প্রথম হাতে পাই ২০১৬'র মে নাগাদ। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ২০১৫'র জানুয়ারী মাসে। রচনাকাল জানুয়ারী ১৯৮৪ থেকে সেপ্টেম্বর ২০১৫। ১৬ পাতার এই কবিতার বইটি শীলা লাইব্রেরী কতৃক প্রকাশিত। প্রচ্ছদ এমন কিছু জটিল নয়। বরং অনেকটাই সহজ। আমার মনে হয় যে কোনো বইতে তার প্রচ্ছদের তুলনায় অন্তর্বতী স্থলে আসল জিনিসগুলো লুকিয়ে থাকে। এক্ষেত্রেও আমার অন্যকিছু মনে হয়নি। প্রবেশপূর্বে কবি শাশ্বত মুখোপাধ্যায় ঋত্বিক ঘটকের একটি ক্ষুদ্র প্রশ্নোত্তর পর্ব রেখেছেন। এক্ষেত্রে প্রশ্ন বা উত্তরটি ক্ষুদ্র হলেও প্রয়াসটি কিছুটা হলেও বৃহৎআকার ধারণ করতে পেরেছে। প্রশ্নোত্তর পর্বটি অনেকটা এরকম....
"প্রশ্নঃ আপনি কেন সিনেমা বানান ?
ঋত্বিক ঘটকঃ কেন বানাই? কারণ আমি একেবারেই পাগল। আমি সিনেমা না বানিয়ে থাকতে পারিনা। আমাদের তো কিছু করে বাঁচতে হয়, তাই না ? তাই আমি সিনেমা বানাই। অন্য কোনো কারণ নাই।"
( তথ্য সূত্র- মুখোমুখি, ঋত্বিক-সত্যজিৎ, উদিসা ইসলাম, ভাষাচিত্র প্রকাশন, ঢাকা, বাংলাদেশ। )
এরপর ক্রমশ ভেতরের দিকে ঢুকলে কবির প্রথম কবিতা 'ওয়াচ-টাওয়ার'এর একটি জায়গায় তিনি লিখছেন
"
ছাপ্পান্ন বছর
.
.
.
.
.
.
আসুন।"
অনেকটা এইভাবেই পাঠকদের অন্দরমহলের রাস্তা দ্যাখাতে চেয়েছেন কবি। ঠিক তার পরের কবিতাটিতে একটি জায়গায় কবি লিখছেন,
"বারবার গন্ধ ঝুঁকে যাওয়ায় কদিনের ছুটি নিলাম।
দূরবীন। ক্যাম্প-ফায়ার।"
এখানে সম্ভবত তিনি মোচ্ছবের কথা বলছেন। তারপরই আবার,
"সালমা ইয়াস্মিন্, বর্তমান ঠিকানা- পার্ক সার্কাস।"
অর্থাৎ কবি তার পরবর্তী গন্তব্যস্থলের দিকে চলেছেন। এরপর 'লিপস্টিক', 'সুরঞ্জনা', 'সন্ধ্যেরা নেমে এলে', 'কোণ','প্যারাম্বুলেটর' ছাড়াও রয়েছে আরো বেশ কয়েকটি কবিতা। কবির 'পুনর্বাসন' কবিতাটিতে শেষের দিকে একটি অংশে রয়েছে,
"উর্ণা বলেছে পশ্চিমের পাল্লা খোলা থাকতো বহুদিনই, এভাবেই কিছু একটা ঘটে থাকবে। দেওয়ালের পেইন্টিং খুলতে খুলতে খেয়াল করি আমাদের পুরনো খোলস আর তাজ্জব হয়ে যাই। বেজে যাচ্ছে সমস্ত সন্ধ্যের গান আর দূরের কাঠ চেড়াইয়ের শব্দ শুরু হয় ঠিক তার পরপর। দুজনে ঘুরতে থাকি Salt লেকের বিভিন্ন আইল্যান্ডে।"
-আমার মনে হয় পাঠকরা, যারা ইতিমধ্যেই বইটি পড়ে ফেলেছেন, তারা কবির মতোই কবিতার সাথে সাথে সল্ট লেকের বিভিন্ন আইল্যান্ডে পৌঁছে গেছিলেন এবং ঘুরে ব্যাড়াচ্ছিলেন।
আরেকটি কবিতা 'সাইরেন'এ কবি লিখেছেন, "৭১ সালে মুক্তি যুদ্ধের সময় বাবা শেষ চিঠি লিখেছিলো আপাকে। এই যে আমি ওঁকে দেখিনি এবং ওঁকে নিয়ে কথা বলে যাচ্ছি, এভাবেই আমি বাবার মধ্যে আর বাবা আমার মধ্যে ঢুকে গেলাম। কারখানায় যারা খাটিয়া পেতে রাখতো তারা Mill বন্ধ হলেই ঘুমোনোর আনন্দে জামা ওড়াত, তারা কেউই আপাকে চেনেনা।" এই পর্যন্ত ঠিকই ছিলো। কিন্তু তারপরই কবি লিখছেন, "লোহা কারখানাগুলো এ'রকমই, মিস্ রোলগুলো গ্যাস কাটিং করে সরিয়ে ফেলা হয়, "অর্থাৎ, কবি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে গেছেন তার চিন্তা-ভাবনা, দর্শন এবং শব্দগুলিকে। আমি মনে করি সচেতন পাঠকেরা এইধরনের লেখা নিয়ে অন্তত দু'বার ভাববেন। সবশেষে 'মিনার্ভা' কবিতা দিয়ে তিনি শেষ করেছেন এই ষোলো পাতার বইটি। বইটির মূল্য কুড়ি টাকা, একেবারেই যথোপযোগী বলে আমার মনে হয়েছে। অন্তিমে কবির 'প্যারাম্বুলেটর' কবিতাটি রইলো।
"সোনালীর সমাজতত্ত্বে স্নাতক এবং স্নাতকোত্ত্বর আগ্রাসন, নায়াগ্রার ফাঁদে বসে খবর পড়ছেন সংঘ-মিত্রা। আস্তে আস্তে উঁচু উঁচু সব ভেঙে পরছে আপনার কাঁধে আর এখান থেকেই প্লেন উড়ছে রোজ।"
পাখিরালা /
শাশ্বত মুখোপাধ্যায় / শীলা লাইব্রেরী
যোগাযোগ : ৮০১৭৭০৫৫৮২
No comments:
Post a Comment