ইচ্ছে বদলের আইরিনঃ পুনর্ভবতা, পুনর্পদায়ন ও পুনরাখ্যায়ন
সৌগত বালী
“ আমি আর ওলি। অথবা, ওলি আর আমি, আসলে আমি বলতে চাই যে ,
আমি ওলিকে পছন্দ করি। বা আমার ওলিকে ভালো লাগে...আর ওলি? ওর কি আমাকে ভালো লাগে?
একটু আধটু যে লাগে না তা নয়। তবে প্রথম দিন থেকে ‘ভালো লাগে’ বলে ফেলাটা বাড়াবাড়ি
হয়ে যেতে পারে। বরং গল্পটা আরেকটু এগোক।” তো এগোক।
আমি অরুন আইনকে চিনি না, যাকে দেখে আপনার লিখতে ইচ্ছে করে।
আমি শুধু দেখতে পাচ্ছি ছাইরঙা আলোয় ক্লীবলিঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকা আইরিন নাম গল্পকে
ইঙ্গিত করে বলে যাচ্ছে, “ আমরা তিনজন লিফটে করে নেমে এলাম একদম গ্রাউনড ফ্লোরে।
শেষবারের জন্য।” এভাবে আমরা ক্রমাগত নেমে আসছি, এই সমবেত নেমে আসা কী? বলতে পারেন
ওলি? শীর্ষেন্দু বাবু, দেখুন আপনার মাথা রক্তে ভেসে যাচ্ছে। মরফিং হয়ে যাচ্ছে
আপনার মুখ; এখন আপনি অনিন্দ্য কিমবা...রেড ওয়াইনের বোতলটা উঠে আসছে মাথার ওপর।
এতো উঁচু থেকে সিলিং দেখা যায় না, আইরিনদের সমবেত স্বর ভেসে
আসছে, লেখক শীর্ষেন্দু দত্তের লেখা ‘আমার নাম আইরিন’ গল্প সংকলনটি এমনই বহুস্বর
যুক্ত। গল্পগুলো পড়তে পড়তে মনে হয় একটা মাল্টিভোকাল ধ্বনিত হচ্ছে প্রেক্ষাপট-এ। এ
বিষয়ে গিলে দ্যলুজ (Giles Deleuze) ও ফেলিক্স
গুয়াতারির (Felix Guattari) একটি উচ্চারন মনে পড়ে যাচ্ছে;
“Who speaks and who acts? It is always a multiplicity.
Even in the person who speaks or acts. We are all little groups. There is no
longer representation, there is only action. The action of theory, the action
of practice in relations of ways-stations or networks.”
সংকলনটির সাত নম্বর গল্পটিতে থমকাতে হয় আবার। ‘আমি ও আমার
আসন্ন বাপ মা’ গল্পটির নামকরণ বলে দিচ্ছে আরেকটি ভ্রুনের গল্পের কথা। কিন্তু
গল্পের মাঝ বরাবর এসে যখন নবারুণ ভট্টাচার্য কে দেখা গেল বেজন্মা ভ্রুনের টিকিট
বিলি করতে তখন আশ্চর্য হতে হয়, আর এখানেই গদ্যটির এতদিনের গড়ে ওঠা ধাপে ধাপে
নির্মাণের লিনিয়ারিটি ভেস্তে গেল আর একইসাথে পোষ্ট কলোনিয়াল পৃথিবী দৃশ্যতা পেল।
এই যে আমাদের চারপাশ ক্রমবিন্যাস-এ হয়ে উঠছে ভারচ্যুয়াল। সামনের মানুষটি নিয়ম মাফিক
কাজ করে যায় অথচ স্পষ্টত বোঝা যায় সে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এই অসৎকণায় ভরা চারপাশ
আবছা মিথ্যে। একটা ফ্যালাসির মতো অথচ বিরল দগদগে ঘা গজিয়ে উঠছে চামড়ায় আর মাছি
উড়তে থাকে। সমাজ, সভ্যতার এইসব বিরল ক্ষতর বিশুদ্ধ উচ্চারন ‘ আমার নাম আইরিন’ ।
ধন্যবাদ গদ্যকার শীর্ষেন্দু দত্ত কে, উনি আমাদের চিরাচরিত গদ্যের ক্লান্তি থেকে
মুক্তি দিচ্ছেন।
পুনশ্চ কটি কথা গ্রন্থটি ওলটালে লেখক পরিচয়ে সন্দীপন,
নবারুণ, উদয়ন –এর উচ্চারন লেখক শীর্ষেন্দু দত্ত-কে একটা প্যারামিটারে বেঁধে দেয়।
যেখান থেকে মনে হয় গদ্যকার শ্রী শীর্ষেন্দু দত্ত কোনও পূর্ব প্রভাবিত লেখকের নাম।
বিষয়টি নিন্দনীয়। এর মধ্যে দিয়ে সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু দত্ত-এর শিল্পকর্মগুলি খাট
করা হয়েছে মনে করি।
আশা রাখি ‘ আমার নাম আইরিন’ ভবিষ্যতে একটা উপত্যকার নাম
হবে।
সত্যি বইয়ের মলাটে ছেপে দেওয়া ঠিক নয় লেখক এঁদের দ্বারা প্রভাবিত। এই ভারটা বরং পাঠকই নিক না !
ReplyDeleteSirsendu r ei Boi er akhan amake Khub teneche
ReplyDeleteSirsendu r ei Boi er akhan amake Khub teneche
ReplyDelete