Friday, May 11, 2018

গল্প ১ : একটি শ্বাপদ ও তার আত্মহনন : অয়ন ভারতী






                                                                             



খানে জঙ্গল আরো গভীরকিছুটা আগে যেখানে কিছু মানুষের হঠাৎ আগমন উপলক্ষ্যে একটা ক্ষণিকের আস্তানা গড়ে উঠেছে তার থেকে গভীর, ঘন তো বটেইএখানে গাছগাছালি বিচ্ছিন্ন নয়, পাখিদের এক গাছ থেকে আরেক গাছে যেতে অনেকটা ফাঁকও পেরোতে হয়নাঅখণ্ড নীরবতার মাঝে থেকে থেকে পাখি ডেকে উঠছে বটে তবে তাও ভীষণ স্তব্ধ যেনজলের তলায় পুরো শরীর নিয়ে গেলে যেমন লাগে এই ঘন জঙ্গলের ভেতরেও তেমন লাগছেতেমনি শব্দহীন, গতিহীন অন্তত বছর এগারোর ছেলেটার তো লাগছেছেলেটা ভয় পাচ্ছেতার চোখ- মুখে ভয় ভয় ভাবহঠাৎ কাছেই একটা পাখি ডেকে উঠলোপরিচিত নয় পাখির ডাকটাকেমন যেনআর তাই ভয় পেয়ে ছেলেটি পাশের মেয়েটির হাত চেপে ধরলোএকটু বেশীই জোর দেওয়া হয়ে গেল বোধহয়মেয়েটি হাতটা ছাড়িয়ে নিলরোগা রোগা পাঁচ আঙুলের চাপে মেয়েটির চোখ - মুখ যন্ত্রনায় কুঁচকে উঠলোতারপরই সামলে নিয়ে ছেলেটির সামনে ঝুঁকে পড়ে ফিসফিস করে বললো, ' ভয় করছে নাকি? '

   ' হ্যাঁ' ' না ' দুইই হতে পারেমেয়েটি হয়তো ' না' ই ধরলোছেলেটাকে তার সঙ্গে চলতে ইশারা করে এগোতে লাগলোছেলেটা তবু একইরকমমেয়েটিকে আরো যেতে দেখেই তার ভয় হয়তো বেড়ে গেলএবার সে দুই হাত দিয়েই মেয়েটির হাতটা পেঁচিয়ে ধরলোবছর সতেরোর মেয়েটি একবার থামলোইতিউতি দেখলো চারপাশযে জায়গায় তারা পিকনিক করতে এসেছে তার থেকে বেশ কিছুটা দূরেই চলে এসেছেছেলেটার কানের লতিতে নিজের ঠোঁট ঠেকিয়ে বললো, ' ভয় নেইচুপআমি সব ভয় তাড়িয়ে দিতে পারি' মেয়েটির এমন কথায় ছেলেটাকে এখন নিশ্চিন্ত দেখাচ্ছে কিছুটামেয়েটা ছেলেটাকে নিয়ে সরে এলো একটু পাশেআশপাশ আরো একবার দেখলোতারপরই সাপের মতো করে পেঁচিয়ে ধরলোছেলেটা এবার অবাক হতে শুরু করেছেআর অবাক হতে হতে তার মুখ- চোখে আবার ভয়ভাবটা ফিরে আসছেপরিচিত মেয়েটিকে তার এখন অপরিচিত লাগছেওর এখন ভয় করছেমেয়েটি আস্তে আস্তে ওকে ক্রমশ নিজের মধ্যে নিয়ে নিচ্ছে যেনউন্মত্ত সেই মুখ দেখে তার মনে হচ্ছে বুঝি কোনো ভ্যাম্পায়ারও চিৎকার করে উঠতে গেল ব্যাথায় কিন্তু মেয়েটি ওর মুখ চেপে ধরলো একহাত দিয়েভীতু ছেলেটার এবার কান্না পাচ্ছেকাঁদতে কাঁদতে সে দেখলো অনেককিছু কিন্তু কিছুই তার বোধগম্য হলোনামেয়েটি কেমন হাঁফাচ্ছেসারা শরীর জুড়ে চকচক করা ঘামের ফোঁটা জলের ধারা হয়ে নেমে আসছেএকসময় মেয়েটি থামলোআরো কিছুক্ষণ পর হেসে কি যেন বললোছেলেটা তা শুনতে পারলোনাবরং সে ব্যাথায় কান্নাভেজা চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলোমেয়েটি সালোয়ার গোছাতে গোছাতে আরো কিসব যেন বলছেকিন্তু কিছুই শোনা যায়নাবরং এবার দৃশ্যটা বদলাতে শুরু করেছেক্রমশ ঝাপসা হচ্ছে সব কিছুছিটকে ছিটকে যাচ্ছে সবএকসময় পুরো দৃশ্যটাই অন্ধকার হয়ে যায়ঠিক সেসময় ছেলেটার মুখ দিয়ে চাপা গোঙানির আওয়াজ বের হলো। 
  ধড়মড় করে উঠে বসলো সুতীর্থআজ আবার সেই স্বপ্ন! হুবহু একএকই জায়গায় শুরু একই জায়গায় শেষস্বপ্নটা, সেই কবে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা সেতো প্রায় ভুলে যেতেই বসেছিলকিন্তু এখন সুতীর্থ বুঝতে পারছে সে কিছুই ভোলেনিগত পাঁচ মাসে এই নিয়ে চারবার দেখলো সে স্বপ্নটাওর পুরো শরীরে ঘাম চটচট করছেগোঙানির ফলে গাল বেয়ে গড়িয়ে নামা লালাটা সে হাতের চেটো দিয়ে মুছে ফেললোঘরে জ্বলা হালকা নীল আলোয় সে দেখলো সঙ্গীতা কাত হয়ে ঘুমোচ্ছেসুতীর্থর গোঙানিতেও ওর ঘুম ভাঙেনিসুতীর্থ দেখেছে গত তিনবারের বারও ভাঙেনিসঙ্গীতার পিঠটা খোলাবেড কভার ওর পুরো শরীরটা ঢাকতে পারেনিসুতীর্থর চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে ওঠেসঙ্গীতার দিকে সে ক্রমশ সরে আসতে লাগলোযেমন করে সিলিঙ ধরে টিকটিকি এগোয়সেরকম করে সুতীর্থ যখন এগোচ্ছে ঠিক সেসময় ড্রেসিংটেবিলের পিছনে একটা শব্দ হলোসে মাথাটা তুললোনিশ্চয় ছুঁচো অথবা ইঁদুরঠিক কি তা খুঁজতে গিয়ে সুতীর্থর চোখ পড়লো আয়নাতেআর পড়ামাত্রই চমকে উঠলোএটা কি সে? কি বীভৎস চোখের চাহনিহালকা নীল আলোয় সেই আবছা প্রতিবিম্ব দেখে সুতীর্থর ভয় লাগলোসে দ্রুত নেমে এলো খাট থেকে দরজা খুলে বেরিয়ে এলো পুবের বারান্দায়দেশলাই ঠুকে সিগারেট জ্বালালোসিগারেট টানতে টানতে সে দেখলো তার সামনেটাল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোয় কিছুটা অংশ আলোকিত হয়ে উঠেছেসিগারেট শেষ করে সে ঘরে আসেবাকি রাতে আর ঘুম আসবেনাতবু সে শুয়ে পড়লোসঙ্গীতা এখন সোজা হয়ে শুয়েছেচাদরটা ভালো করে ওর গায়ে জড়িয়ে দিলএকফোঁটা চোখের জল চাদরের ওপর ঝরে পড়লোদ্বিতীয় ফোঁটাটাকে সে মাঝপথেই ধরে ফেললোচোখের জল বড়ো বালাইনা পড়তে দেওয়াই ভালো। 

                                                                          
  তেমাথার মোড়টা আজ একেবারে খাপছাড়াশুনশানরোজকার মতো গাড়ির হর্ন, কন্ডাকটরের কর্কশ গলায় চিৎকার, মানুষজনের হই- হল্লা নেইচারপাশের দোকান গুলোও সব বন্ধঅথচ এখন বিকেল পাঁচটা বাজেআশেপাশের এলাকার মধ্যে এটা একটা ব্যস্ততম এলাকাআজ সব ব্যস্ততা কোনো যাদুঘরে রাখা আছে বুঝিসুতীর্থরা দাঁড়িয়ে আছে যে চায়ের দোকানের সামনে সেটাও এখনো খোলেনিবাইরের বাঁশের চঁটা দিয়ে বানানো বেঞ্চিটাও ফাঁকাঅন্যদিন এসময়েই এখানে জমাট আড্ডা শুরু হয়ে যায়আজ সব ফাঁকাসেইসব মানুষদের ছাড়া বাঁশের বেঞ্চিটাকে দেখাচ্ছে কঙ্কালের মতো। 
  ' নাহ! আজ বাড়ি থেকে বেরোনো একদমই উচিত হয়নি দেখছিএকটা বাসও পাচ্ছিনাআধঘণ্টা হয়ে গেল' সমরেশ উশখুশ করে উঠে পড়েঅস্থিরভাবে পায়চারি করতে করতে সামনে পড়ে থাকা ছোট্ট পাথরের খোয়াটাকে বিরক্তিতে ডান পা দিয়ে লাথ মারেপাথরটা নড়েনাসমরেশের বুড়ো আঙুল ব্যাথায় কুঁকড়ে যায়' একটা অটোও নেইসরকার নাকি বনধ আটকাবে, বাস চালাবে তা কই? ' 


 সরকার নয়, সুতীর্থকেই প্রশ্ন করে সমরেশসুতীর্থ হাসেতারপর বলে, ' পাথরে লাথি মেরে আরো বিপদ ডেকে আনবে ব্রাদারচুপচাপ বসো এখানেতুমি না আরো অনেকেই এই সিচুয়েশনে আছে'



 সমরেশ একটু থমকায়' সিচুয়েশন ' শব্দটা ওকে ভাবায় বোধহয়তারপর বলে, ' ধ্যাত! তোমার এই এক দোষসুযোগ পেলেই বাণী ঝাড়োকি হতো আজ না আসলে? তোমার জন্যই তো এলামবললে অসুবিধা হবেনা, এদিকে নাকি বিরোধী দলের জোর নেই তেমনঅথচ দেখো দিব্যি বনধ করে দিল'


 সুতীর্থ কিছু বলেনা  চুপ থাকাই ভালোমিটিমিটি হাসে কেবলআজ সত্যিই সমরেশদা আসতে চায়নিগত পরশু সন্ধ্যার সময় হঠাৎই সবাইকে চমকে দিয়ে বিরোধী নেতা রজত সেনগুপ্ত ঘোষণা করেন, আগামী বুধবার তারা স্বতঃস্ফূর্ত বনধে নামছেনসমগ্র রাজ্যবাসীকেও তিনি এই বনধ সফল করবার জন্য আহ্বান জানানখবরটা দেখে সুতীর্থ অবাক হয়েছিলতারপর মজাও পেয়েছিলজীবন থামাতে মানুষকে আহ্বান! তবে নিমন্ত্রণে যে অনেকেই খুশি তা পরদিন অফিসে গিয়েই ও টের পেয়েছিলএকাউন্টসের শ্যামল বাগচি দাঁত কেলিয়ে বলেছিল, ' মুখ্যমন্ত্রী এবার ঠেলা বুঝবে! সাধারণ মানুষ যে এখনো প্রতিবাদ করতে জানে তা বোধহয় ভুলে গেছিল' বলার পর শ্যামল বাগচি একটা বিশ্রী খিস্তি করেছিল
' জীবনকে স্তব্ধ করে কি প্রমাণিত হবে শ্যামলদা? ' মুখ না তুলেই জিজ্ঞেস করেছিল কৃষ্ণেন্দু
  ' মানে? ' শ্যামল বাগচির দাঁত কেলানো বন্ধ হয়ে গেছিলঅস্তিত্ব সংকটে ভোগা ভুরু দুটো কুঁচকে গেছিলতারপর বলেছিল, ' তুমি বুঝবে নাতোমরা ভাই কবিতা টবিতা লেখোতোমাদের এসব বালাই নেইরাজ্যে চাকরি নেই, শিল্প নেইবনধ তাই দরকারখুব দরকারবিপ্লব চাই! বিপ্লব! ' শেষের তিনটি শব্দ একটু নাটকীয় করে বলে শ্যামল বাগচি
কৃষ্ণেন্দু একটু চুপ করে থাকেতারপর বলে, ' বনধ কখনো বিপ্লব হয়না শ্যামলদাবিপ্লব এমন হয়নাআর কেন্দ্রে তো আপনাদের দলই আছেতাতেই বা কি হচ্ছে! '


' কাল তাহলে তুমি আসছো '? 


' হ্যা আসছি

বাড়ি ফেরার সময় বাসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সমরেশ বলেছিল, ' কাল তুমিও আসছো নাকি? ' 

' দেখা যাকফোন করবো তোমাকে ' সুতীর্থ তখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনিযদিও ফোন তাকে করতে হয়নিভোর ছটার সময় সমরেশদাই ওকে ফোন করেছিলসুতীর্থ তখনো বিছানা ছাড়েনিফোনটা কানে চেপে ঘুম জড়ানো গলায় হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে ভেসে এসেছিল সমরেশের গলা ' আসছো নাকি? '

সমরেশকে জানিয়েছিল সে আসছেসারাটা দিন নাহলে ঘরের মধ্যে বসে থাকাসঙ্গীতার সঙ্গ আজকাল অসহ্য লাগছে ওর। 
'' চুপ মেরে গেলে যে!  কি ভাবছো? " সুতীর্থ বর্তমানে ফিরে আসে সমরেশের প্রশ্নে
" কিছুনাতুমি বসোতো এখানেঅস্থির হয়ে লাভ আছে? "


সুতীর্থর কথায় সমরেশ হাসেভীতু, অসহায় মানুষের হাসি। 
দুজনেই কিছুক্ষণ চুপচাপসুতীর্থ একমনে সিগারেট টেনে যায়আপাতত সে কি যেন ভাবছেভাবছে বলেই কখনো ঘনঘন আবার কখনো দেরিতে শিগারেট টানছেসমরেশের অস্বস্তি হয়সে বেশিক্ষণ চুপ থাকতে পারেনাএকটু পরেই বলে, " এসে অবশ্য লাভই হলো! না আসলেই বরং অসুবিধা হতো

" লাভ কিরকম দাদা? " সুতীর্থ একটু অবাক হয়
" আরে বিরোধীদের বনধ সত্তেও আমরা প্রেজেন্ট থাকলামচেয়ারম্যান খুশি হবে এতে! " বিয়াল্লিশের সমরেশকে  বিগলিত দেখায়সুতীর্থ কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে সমরেশের দিকতারপরই অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়ওর মুখে হাসি ফুটে ওঠেএখন আস্তে আস্তে চারপাশ স্বাভাবিক হচ্ছেদোকানপাট খুলছেসুতীর্থ হাতঘড়িতে সময় দেখে-- ৫ টা ১০চেয়ারম্যানটা শালা হারামির একশেষকোনো কাজ নেই অথচ পুরো পাঁচটা পর্যন্ত সবাইকে বসিয়ে রাখলোশালা পা চাটা পাব্লিকবাঞ্চোত একটাসুতীর্থ অর্ধেক পোড়া সিগারেটটা মাটিতে ফেলে দেয়দিয়েই পিষতে থাকে যতক্ষণ না সেটা থেতলে যায়। 
 শরৎ আবাসনের সামনে সুতীর্থ যখন পৌছালো তখন প্রায় রাত আটটা বাজেচারপাশটা অন্ধকার হতে হতে হয়নিল্যাম্পপোস্টের হলুদ আলোটা জ্বলছেদোকানপাট প্রায় সবই বন্ধসকালের রেশ রয়ে গেছে হয়তোএলাকাটা কেমন ঘোলাটে লাগেসুতীর্থর চোখ চলে যায় তাদের ফ্ল্যাটের দিকঅধিকাংশ ফ্ল্যাটের থেকেই ভেসে আসছে টিভির আওয়াজওর ঘরের থেকেও আসেজানালাটার পর্দাও দেওয়া আছেশালা ওর বাড়িতেও বনধ নাকি আজ! সুতীর্থ বাড়ির দিক এগোয়লিফট নয় সিড়িই ব্যবহার করে সেনিজের ঘরের দরজার সামনে দাঁড়ায়বন্ধ আছেসেটাই স্বাভাবিকসুতীর্থ সাদা কলিংবেলটায় চাপ দেয়ভিতর থেকে কোনো সাড়া নেইসুতীর্থ বিরক্ত হয়দ্বিতীয়বার একটু জোরেই চেপে ধরলো সে সুইচটা কাজ হলোদরজা খুলে দিয়েছে সঙ্গীতাসুতীর্থ ধমকাতে গিয়েও পারেনাসঙ্গীতার মুখ দেখে থমকে যায়
ঘরে ঢুকে ঘামে ভেজা জামা ছাড়তে ছাড়তে সুতীর্থ বলে, ' কি হয়েছে? মুখের ভাব অমন কেন? ' 

সঙ্গীতা চুপ করে থাকেজবাব দেয়নাঅথচ সে তাকিয়ে আছে সুতীর্থর দিকেইঅস্বস্তি নিয়ে সুতীর্থ প্রশ্ন করে, ' কি হলো? ' 

' মামা মারা গেছে'

সুতীর্থ অবাক হয়' কবে? ' 

' আজইসকালের দিকহার্ট এটাকএকটুও টাইম দেয়নি' সঙ্গীতা মাথা নীচু করে ফেলেগাল বেয়ে গড়িয়ে নামতে থাকে জলের ধারাসুতীর্থর অস্বস্তি হয়, সে কাউকে সান্ত্বনা দিতে পারেনাজানেনা কি করে কি করতে হয়সঙ্গীতা ওর বড়মামার কাছে মানুষকিন্তু সুতীর্থকে এই মৃত্যু একেবারেই অভিভূত করতে পারছেনাকিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকার পর সে নির্বিকার ভাবে সঙ্গীতাকে খেতে দিতে বলেঅবাক হয়ে সঙ্গীতা তাকাতেই থাকে সুতীর্থ বাথরুমের দিক হাঁটা দিয়েছে
                                                                
রাত এখন কত সুতীর্থ জানেনাজানার জন্য সে পাশ ফিরে দেয়াল ঘড়িটার দিক তাকায়দুটো পনেরো বাজেঘুমই আসছেনাএপাশ - ওপাশ করেই এতটা সময় কেটে গেলনাইটল্যাম্পের নীল আলোয় সুতীর্থ আবার পাশ ফেরেসঙ্গীতা চিৎ হয়ে ঘুমোচ্ছেবড়ো শান্তির ঘুমঠেলা মেরে জাগিয়ে দিলে কেমন হয়? ওর না আজ মামা মারা গেছে? মুখ সারাক্ষণ থমথমে ছিল? সুতীর্থ হাত দিয়ে ঠেলা মারতে গিয়েও থমকে যায়দেখে সঙ্গীতার নাইটির প্রথম হুকটা খোলাকিছুক্ষণ চুপচাপতারপর সঙ্গীতাকে দুহাত দিয়ে নিজের দিকে টেনে নেয়ভিতরে ব্রা পড়েনি বোঝা যায়আস্তে হুক তিনটে খুলতেই বেরিয়ে আসে ফর্সা বুকদুটোর অনেকাংশসুতীর্থ একবার তাকায় সঙ্গীতার মুখের দিকে এখনো ঘুম ভাঙেনিচোখের পাতা তিরতির করে কাঁপছেকোনো স্বপ্ন দেখছে বোধহয়চোখ সরিয়ে সুতীর্থ হাত রাখে সঙ্গীতার বাম দিকের নিটোল স্তনেসাঁপের মতো ঘষটে ঘষটে উঠে আসে সঙ্গীতার বুকের উপরমাথাটায় ঝিমঝিম ভাব নিয়ে সুতীর্থ ঠোঁট ফাঁক করে দাঁত ছোঁয়ায় স্তনের উপরআর তাতেই সঙ্গীতার ঘুম ভেঙে যায়ভীত গলায় কেঁপে উঠে বলে, ' কে? ' 

' আমি আবার কে? ' বলেই সুতীর্থ আরেক হাত দিয়ে সঙ্গীতার শরীর ঘাটতে থাকে
ঘুম ভাঙা চোখে সঙ্গীতা তাকায়তারপর ধাতস্থ হতেই সুতীর্থকে সরিয়ে দিতে যায়কিছুটা কাঁটা - কাঁটা স্বরে বলে, ' লজ্জা করেনা? আজকেও? সরো' সুতীর্থকে একঝটকায় নামিয়ে দেয়নাইটির বোতাম আটকাতে আটকাতে হঠাৎ সুতীর্থর মুখের দিক চাইতেই ও চমকে উঠলোসুতীর্থর চোখদুটো যেন জ্বলছেসে শীতল দৃষ্টি কি ভয়ানক! সঙ্গীতা অজান্তেই কেঁপে উঠলোকিছু বলার আগেই সুতীর্থ ওর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লোদুহাতে খামচে ধরলো ওর দুই বাহুঅস্থিরভাবে খুলতে লাগলো নাইটির বোতামঘটনার আকস্মিকতায় সঙ্গীতা পুরো হকচকিয়ে গেলদুহাতে সুতীর্থর মুখটা সরিয়ে দিতে গিয়েও পারলোনাসুতীর্থ ওকে বিছানায় চেপে ধরলো সজোরে সঙ্গীতার এবার কান্না পেল
' আজ ছেড়ে দাওআজ হবেনাপ্লিজ সুতীর্থ

' চুপভয় করছে তোমার? আমি আছি তোচুপ' ঘড়ঘড়ে স্বরে বললো সুতীর্থনীল আলোয় ওকে দেখাচ্ছে একটা জন্তুর মতোসঙ্গীতা আর তাকাতে পারছেনাচোখ বন্ধ করে প্রতিরোধহীন প্রতিরোধে অবশ হতে থাকেচূড়ান্ত মুহূর্তটার সময় সুতীর্থ ফিসফিস করে যেন কি বলতে থাকেসঙ্গীতা তা শুনতে পায়নাদাঁত আর নখের আদর শেষ হয়পাশে পড়ে থাকা সুতীর্থকে দেখে সঙ্গীতার মনে হলো কোনো সরীসৃপ, বিষ ঢালার পর যে নিস্তেজ হয়ে পড়েছে। 

                                                                            
 ধুর! আবার ভুল হয়ে গেলএই নিয়ে দুবারএকরাশ বিরক্তি নিয়ে সুতীর্থ সামনের কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকেসব কেমন এলোমেলো লাগছেরঙ, অক্ষর সবকিছু যেন একটা অদৃশ্য ধাক্কায় গুলিয়ে গেছেগরমও লাগছে খুবমাথার উপর হাইস্পিডে ফ্যান চলা সত্ত্বেও সারা শরীর বেয়ে ঘাম নামছেলোহার পিন্ডের মতো ভারী মাথা নিয়ে সুতীর্থ চারপাশে তাকায়সবাই স্বাভাবিক, সুস্থ এবং নিশ্চিন্ত
' কি ভায়া! এত ঘামছো কেন? শরীর খারাপ নাকি? ' সমরেশ কখন যে ওর পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তা সুতীর্থ টেরই পায়নিজবাব দেওয়ার কথাও সে ভুলে যায়সমরেশ ফের ঠেলা মারে ওকে, ' কি হলো? কিছু নিয়ে চিন্তিত নাকি

' কিছুনাঠিকই আছি দাদা' সুতীর্থ হেসে উত্তর দেয়সমরেশদা কি কিছু টের পেয়েছে? সে চোখ সরিয়ে নেয়কম্পিউটারের দিক তাকিয়ে থাকেমাউসের উপর উদ্দেশ্যহীন হাত ঘোরাফেরা করতে থাকে
' ঠিক আছো? আমি ভাবলাম,,,, ' কথা শেষ না করে সমরেশ বলে ওঠে, ' তোমাকে আজ কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছেঅনেকটা টিকটিকির মতো' বলেই হাহা করে হেসে ওঠে
মাউসের উপরে রাখা সুতীর্থর হাত থেমে যায়সমরেশের দিক চেয়ে থাকে ফ্যালফ্যাল করেসে দৃষ্টি দেখে সমরেশ থমকে যায়সুতীর্থর পিঠে চাপড় মেরে বলে, ' চলো খেয়ে আসা যাককাজ পরে করো'
ওয়াশরুমে গিয়ে চোখে-মুখে জলের ঝাপটা দিয়ে সুতীর্থ আয়নার সামনে দাঁড়ায়মুখটিকে একটু ঝুঁকিয়ে দেয়তাকে কি এখনো সরীসৃপের মতো দেখতে লাগছে? টিকটিকির মতো ভঙ্গুর, ফ্যাকাশে? আক্রমনের ক্ষমতাও যার শেষ হয়ে গেছে

ক্যান্টিনের কোনার দিকের টেবিলটায় আজ সমরেশরা বসেছেগোল টেবিলের চারদিকে চারটে চেয়ারসুতীর্থর জন্য একটা খালি জায়গা রেখে সমরেশরা বসেছেসুতীর্থ এগিয়ে যায়চেয়ারটার পিছনেই খোলা জানালাহাল আমলের নয়, পুরোনো কালের গরাদ দেওয়া জানালামোটা-মোটা শিকতার ওপাশেই বুনো ঝোঁপ, ঝোঁপ পেরিয়ে জলা ডোবাসুতীর্থ দেখে একটা কাক ঝোপের মধ্যে খাবার খুঁজছেক্যান্টিনের বাসি খাবার অনেকসময়ই ওখানে ফেলা হয়কাকটাকে দেখে ওর ভয় লাগছেকি কুৎসিত কালো চেহারাসুতীর্থর সঙ্গে কাকটার একবার চোখাচোখি হলোসুতীর্থ তখন কাকটাকে তাড়ানোর জন্য জানালা দিয়ে হাত বের করে শূণ্যে ভাসাতে লাগেকিন্তু কাকটা উদাসীনসে আবার খাবার খোঁজায় মন দেয়কাকটা কি তাকে উপেক্ষা করছে? মানুষ বলে আর গন্যই করছেনা? না না তা কেন হবে একটু চেঁচালেই হয়তো কাকটা ভয় পেয়ে উড়ে যাবেসুতীর্থ বেশী জোরে নয় আস্তে করে কাকটাকে ধমক দিতে চেষ্টা করে কিন্তু গলা দিয়ে কোনো আওয়াজ বের হচ্ছেনাআশ্চর্য! এরকম হচ্ছে কেন?  আরো দুএকবার সে চেষ্টা করে কিন্তু কোনো চিৎকার সে করতে পারেনা বরং কাকটা তার খাবার নিয়ে উড়ে যায়সুতীর্থর দিক পিছন ফিরে উড়ে যায়উড়ে যেতেই সুতীর্থর নাকে প্রস্রাবের ঝাঁঝালো গন্ধ এসে ঝাঁপটা মারেএদিকে কেউ না আসলেও মাঝেমধ্যে দারোয়ান গিরিশ এসে পেচ্ছাপ করে যায়সেই গন্ধই ওর নাকে আসছেপেচ্ছাপটা গিরিশেরওর চেহারাটা ভেসে উঠতেই সুতীর্থর ঘেন্না আরো তীব্র হয়সে উঠে গিয়ে থুতু ফেলেবেশ কয়েকবারএকটু জল খাওয়া দরকারগলাটা শুকিয়ে যাচ্ছে খালিপুনরায় সে টেবিলে এসে বসে কৃষ্ণেন্দু, সমরেশ জোর আড্ডা জমিয়েছেপাশে বসে মহিমদা একমনে খবরের কাগজ পড়ছেসুতীর্থ এসে বসতেই সমরেশদের আলোচনা থামেমহিমের দিকে তাকিয়ে বলে, ' এবার কাগজটা রাখ মহিমখবর বাড়ি গিয়েও পড়তে পারবি


মহিম কাগজটা সরিয়ে রেখে রোজকার মতো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলেতারপর প্রশ্ন করে, ' রোজ রোজ দুনিয়াটা কেমন বদলে যাচ্ছে রেমাঝেমাঝে মনেহয় কেন বড়ো হলামসেই ছোটোবেলাতেই কেন জীবনটা থমকে গেলনা? '

' তোর এই রোজকার প্রশ্নের কি জবাব দেবো বলতো? ' সমরেশ হাসে
মহিম থেমে যায়বিরক্ত মুখে বলে, ' আরে ধুরইয়ার্কি ছাড়গত পরশুর কেসটা পড়েছিস? এত খারাপও মানুষ হতে পারে! ' 

সমরেশ থতমত খেয়ে যায়সেই অবস্থাতেই বলে, ' কেন কি হয়েছে? একটু খুলে বলতো আমায়

' কী আর হবে? সেই রেপএকটা ক্লাস টেনের মেয়েকে চারজনে মিলে রেপ করেছেএকবার নয় বেশ কয়েকবারআর যাহ পুলিশ আমাদের! অভিযোগই নাকি নিচ্ছিলনা প্রথমটায়শেষমেশ চাপে পড়ে নিয়েছে' মহিম থামেকথাগুলো বলার সময় ওর রগ ফুলে ফুলে উঠছিলনিজের মেয়ের মুখটা মনে পড়ে যাচ্ছিল হয়তোসমরেশও ভাবতে থাকেতার মেয়েটাও ক্লাশ টেনরোজ টিউশনি থেকে ফিরতে ফিরতে রাত আটটা বেজে যায়আসার পথে একটা ক্লাব পড়েসমরেশ আর ভাবতে পারেনাচোখ বন্ধ করে ফেলে
' রেপটা ঠিক কখন হয়েছে মহিমদা? মানে এক্সাক্ট টাইমটা? '  সুতীর্থর প্রশ্নে সকলে অবাক হয়ে যায়অবাক ভাব মুখে নিয়েই মহিম বলে, ' সেটা তো লেখা নেই, তাও আন্দাজ আটটা সাড়ে আটটা

' কেউ ধরা পড়েছে মহিম? ' সমরেশ প্রশ্ন করে
' হ্যাঁতবে সবাই নয়একজন এখনো ফেরারসেই শুয়োরের বাচ্চাটা কোথায় গেছে তার হদিশ নেই'
সুতীর্থ ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেহাতের সিগারেটটা পুড়তে পুড়তে নিঃশেষ হয়ে আসেচারজনের একজন এখনো ফেরারতার মতোইসুতীর্থর মাথার ভিতর যন্ত্রনা করছেপ্রায় নিভে যাওয়া সিগারেটটা পরপর বেশ কয়েকবার টান দিল সেধোঁয়া হচ্ছেনাবরং ফাঁপা একটা আওয়াজ বেরোচ্ছে দুই ঠোঁট চিরেআরেকটা সিগারেট ধরালো ও
' যাক পুলিশ তো ধরেছেদেখা যাক কি হয়! ' 

কৃষ্ণেন্দু এতক্ষণ চুপ করে ছিলসমরেশের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো, ' কি আর হবে দাদা! বড়জোর চার-পাঁচ বছরের জেল! তারপর আবার তো এরা ফিরে আসবে এই সমাজেইএদের নিয়েই চলবে সমাজপোকায় কাঁটা সমাজ

মহিম মাথা নেড়ে সমর্থন জানায়তারপরই বলে, ' সরাসরি যাবজ্জীবন হওয়া উচিতনাহলে এরা শোধরাবে নাপচে মরুক জেলের অন্ধকারে

' না মহিমদাধর্ষণের একমাত্র শাস্তি হওয়া উচিত মৃত্যুএদের অন্ধকারে বাঁচারও অধিকার নেইঅবশ্য আমাদের দেশে ধর্ষকের ফাঁসি হয় ধর্ষিতা কতটা মরা মরেছে তা দেখে' কৃষ্ণেন্দুর চোখমুখ শক্ত হয়ে ওঠেসুতীর্থর দিক ফিরে বলে, ' কিরে? ঠিক বলিনি? '  
সুতীর্থ চমকে ওঠেতারপরই সজোরে মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়' অবশ্যইঠিকই বলেছিস

সুতীর্থর অস্থিরতা কৃষ্ণেন্দুর নজর এড়ায়নাবলে, ' তোকে কেমন অসুস্থ লাগছেশরীর ঠিক আছে তো তোর? ' 

' হ্যাঁ! হ্যাঁ! ঠিকই আছি' সুতীর্থ হেসে উত্তর দেয়কৃষ্ণেন্দুর বড়ো বড়ো দুটো চোখ ওকে বারবার অস্বস্তিতে ফেলছেসুতীর্থ তাকাতে পারছেনামাথা নীচু করে সে মনে মনে আওড়াতে থাকে, ' ধর্ষণের একমাত্র শাস্তি মৃত্যু! ' একমাত্র! যাবজ্জীবনও নয়আচ্ছা কৃষ্ণেন্দু যদি জানতে পারে সে অর্থাৎ সুতীর্থ গতরাতে তার স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে তবেও কি ওর রায় একই থাকবে? সুতীর্থর ভাবনা আর এগোতে পারেনাসিগারেটটাও শেষ হয়ে আসছেএকটু জোরেই পরপর কয়েকটা টান দিল সেগাঢ় ধোঁয়ায় সে মুছে দিতে চাইছে তার পাশের তিনজনকেকুয়াশার মতো ধোঁয়া বের হলে ভালো হয়সুতীর্থ খুশী হতে গিয়েও দেখলো ধোঁয়া কেটে গিয়ে ফের স্পষ্ট হয়ে উঠছে তিনটি মুখদুই আঙুলের ফাঁকে পুড়ে শেষ হয়ে যাওয়া সিগারেটটার দিক তাকায় সুতীর্থহাসি ফুটে ওঠে ওর মুখে, নিজেকে আড়াল করার কি হাস্যকর চেষ্টা

তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে উঠে সুতীর্থ দেখলো আজ স্টেশনে ভিড় একটু কমসচরাচর এমনটা দেখা যায়নাআশপাশের লোকজনের চিৎকার, পানের দোকান থেকে ভেসে আসা হিন্দি গান এসব ছাপিয়ে যান্ত্রিক মহিলা কন্ঠ জানান দিচ্ছে সুতীর্থর ঘরে ফেরার ট্রেন দুনম্বর প্ল্যাটফর্মে আসবেসুতীর্থ ঘড়ির দিক তাকালোএখনো মিনিট পনেরো মতো বাকি আছেদু নম্বরে এখনই যেতে ইচ্ছা করছে নাবলতে গেলে আর কোথাওই যেতে ইচ্ছে করছেনা ওর সারা শরীরটা কেমন জমাট বাধা বলে মনে হচ্ছেমনে হচ্ছে সারা শরীরের কোশে কোশের মধ্যে বড়সড় ফাঁক তৈরি হয়েছেআর সেই ফাঁক দিয়ে সূচঁ বেঁধার মতো হাওয়া ঢুকছেসুতীর্থর এখন শীত করছে কেমনমাথাটা অসম্ভব ভারীভেতরে কেমন দপদপ করছেসুতীর্থর মনে হচ্ছে এই মাথাটা ও আর বেশীক্ষণ বয়ে নিয়ে যেতে পারবেনাপিছনের একটা ফাঁকা বেঞ্চিতে ও বসে পড়লোবিয়ের পর সঙ্গীতাকে নিয়ে একবার এখানে বসেছিলএই বেঞ্চিটাতেই কি? কে জানেসুতীর্থর জানার আর ইচ্ছাও নেইসে পকেট হাতড়ায়সিগারেটের খাপটা নেইকোথাও ফেলে এসেছে হয়তোপাশেই দোকানইচ্ছে করলেই কিনে আনা যায়কিন্তু সুতীর্থ নিশ্চিত ও সিগারেট ধরাতে পারবেনাশেষ অবলম্বনহীন সুতীর্থ এবার উঠে দাঁড়ায়ট্রেন আসার সময় হয়ে গেছে প্রচণ্ড ভারী ভাবটা মাথা থেকে সারা শরীরে ছড়িয়ে যাচ্ছেওকে দুনম্বরে যেতে হবেসুতীর্থ হাটতে থাকেমাথার উপরের ওভারব্রিজটা যেন মাথার ওপর চেপে বসেছেব্রিজে একএকজন উঠলেই সেই ভার আরো বেড়ে যাচ্ছে সুতীর্থ একটু দ্রুতই হাঁটতে হাঁটতে নেমে আসে রেললাইনেসুতীর্থর মনে হচ্ছে কারা যেন চিৎকার করছেকাউকে সাবধান করছে যেনসুতীর্থ মাথা ঘামায়নাঘামানোর মতো অবসরও তার নেই সে হাঁটতে থাকেমাথাটা এবার ছিঁড়েই যাবে মনেহয়সুতীর্থ আর চলতে পারেনাদুহাতে মাথা চেপে ধরে দাঁড়িয়ে পড়েচারপাশ ক্রমশ বোবা হয়ে আসছেশব্দহীন, দৃশ্যহীনসুতীর্থ সব ভুলে যাচ্ছেভুলে যেতে যেতে সুতীর্থ হঠাৎ একটা প্রচণ্ড ধাক্কা খেলোসুতীর্থ কিছুটা সময় শূণ্যে ভাসলোভাসতে ভাসতে সুতীর্থ দেখলো তার ঘরে ফেরার ট্রেনটা তাকে উড়িয়ে নিয়ে চলেছেএক্ষুনি হয়তো কোনো পোস্টে ও ধাক্কা খাবেঅথবা লাইনেই মুখ থুবড়ে পড়বেশরীরটা থেঁতলে যাবেঘাড় মাথার অস্তিত্ব আর থাকবেনাতারপর অনেকে তার থ্যাতলানো  শরীরটা দেখে শিউরে উঠবে এখানে অথবা বাড়ি ফিরে কারো কারো বমিও পাবেপাকমুক্তির আগে অনেক যন্ত্রণা থাকে

No comments:

Post a Comment