Sunday, November 4, 2018

সুমন্ত কুন্ডু'র গল্প




  ঘাতক 


কারোর মুখে কোন কথা নেই ।  বসে বসে একমনে শুধু নিজেদের দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শুনে চলেছেন জনা কয়েক মানুষ ।  চোখের দৃষ্টি স্থির । ঘোলাটে মণিকোঠার ভিতরে নিরন্তর বিষণ্ণতা ।  

মনিময় ঘোষাল ছায়ার মতো নিঃশব্দে সেই মানুষগুলোর পাশে এসে দাঁড়ালেন । সেভাবে কেউ ওনাকে লক্ষ্যই করল না, করলেও সম্ভাষণ করে নীরবতার শব্দভঙ্গে সচেষ্ট হল না । মনিময় বাবুও ওদের মতোই উদাসীন ভাবে দাঁড়িয়ে রইলেন । তার চোখেমুখেও নিদারুণ বিষণ্ণতার ধূসর ছায়া । এটা একটা ছোটোখাটো পার্কের মতো জায়গা । রোজই বিকালে একটু হাঁটাহাঁটি করতে এখানে আসেন তিনি । সমবয়েসি আরও জনাকয়েক এসে জোটে । শরীরচর্চার সাথে সাথে একটা বৈকালিক আড্ডা জমে ওঠে বেশ । সদ্য রিটায়ার করা মানুষজন সব, বয়েস মোটামুটি ষাট থেকে পঁয়ষট্টির মধ্যে । এদিক-সেদিকের নানা কথা নিয়ে চলে গল্পগুজব । কিন্তু আজকের পরিস্থিতিটা একেবারে অন্যরকম । সবাই চুপচাপ । শ্যামা মুখুজ্জে, কাজল মিত্তির সহ আড্ডার নিয়মিত সদস্যরা উপস্থিত থাকলেও কেউ কোন কথা বলছে না । এসে পৌঁছানো মাত্রই মনিময় বাবু এই থমথমে ব্যাপারটা আঁচ করলেন । আড্ডাবন্ধুদের এই অস্বাভাবিক নীরবতার কারণ অবশ্য তিনি জানেন । আজ সকালেই তুষার দত্ত মারা গেছে । একদম আচমকাই । সকালে দোকানে গিয়েছিল, রোজকার মতো কাজ করছিল হঠাতই বেলা সাড়ে দশটা নাগাদ বুকে যন্ত্রণা, স্ট্রোক এবং ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই জলজ্যান্ত মানুষটা শেষ ।  তুষার দত্ত এ আড্ডার অন্যতম সদস্য । তারই আচমকা মৃত্যুসংবাদের ভার সকল আড্ডাবন্ধুদের এরকম ভাষাহীন করে দিয়েছে ।  

                তুষার দত্ত বেশ পয়সাওলা লোক । কোলকাতার যে কোন বড় নার্সিংহোমে লাখ লাখ টাকা ঢেলেও চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা ছিল । কিন্তু এই আচমকা স্ট্রোক এমনই যে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার সুযোগটুকুও দিল না । আচমকা সেই যে বুক চেপে ধরে পরে গেল আর উঠতেই পারলো না । স্ট্রোক জিনিসটা এমনই মারাত্মক ।


মনিময় বাবু বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলেন । নিজের বিষণ্ণতাটাকে সেই গুমোট দমবন্ধ হাওয়ায় মিশিয়ে দিয়ে উদাসীন চোখে বসে রইলেন আর সকলের মতো । আড্ডার মেজাজও থমথমে । মাঝে মধ্যেই বুকচাপা দীর্ঘশ্বাসের শব্দ শোনা যাচ্ছে শুধু । সকলেই নিজের ভেতরের কষ্টটা নীরবতার আড়াল দিয়ে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে । নিশ্চল কিছু সময় কাটে । তারপর মৌনতা ভঙ্গ করে শ্যামা মুখুজ্জেই প্রথম কথা বলে ওঠলেন ‘কি যে মানুষের জীবন ! কার কখন কি হয়ে যায়, কে জানে !’

 ‘স্ট্রোক এমনই জিনিষ গো দাদা । শক্ত সামর্থ্য মানুষকে দু’মিনিটে শুইয়ে দিচ্ছে’ পাশে বসা সহদেব রায় শ্যামা মুখুজ্জের আক্ষেপটাকেই আরও একটু প্রসারিত করল ।

হম, তুষারের নাহলে কিবা এমন বয়েস । তবুও দ্যাখো…’  প্রত্যুত্তরটা আর শেষ করতে পারলেন না মুখুজ্জেদা তার আগেই গলা বুজে এলো ।
তুষারের তো একবার বাইপাস সার্জারি হয়েছিল না?  বাইপাস হলে স্ট্রোক অবধারিত  কাজল মিত্তির তথ্য সংযোজন করে বলে উঠলো  আরে বাইপাস কি বলছ । আমার এক অফিসের কলিগ । আমার চেয়েও ছোট । শরীরে কোন রোগ নেই । দুম করে সেদিন অফিসে আসতে গিয়ে স্ট্রোক । একদম হাট্টাকোট্টা মানুষ –এবারে বিকাশ ঘোষ উদাহরণ দেন । মনিময় বাবু সংলাপে অংশ নেন না বটে কিন্তু মন দিয়ে সকলের কথাই শোনেন । সত্যিই স্ট্রোক নামক এই মারনরোগটা ইদানীং খুব মারাত্মক হয়ে উঠেছে । নাহলে তুষারের মতো দিব্যি সুস্থ সবল মানুষটা এমন দুম করে শেষ হয়ে যেতে পারলো ! শুধু তুষার কেন গত কয়েকমাসে এই এলাকার অশোক পাল, পরিমল কুণ্ডু সহ প্রায় জনা চারেক মারা গেছে এই স্ট্রোকেই । সবারই বয়েস পঁয়ষট্টির মধ্যে । শোকের সাথে সাথে একটা ভয়ও পাকিয়ে ওঠে মনে । বয়সটা ওনার নিজেরও পঁয়ষট্টি হয়েছে , দুম করে কিছু একটা হয়ে যেতে কতক্ষন । আশঙ্কা একা মনিময় ঘোষালের না, আশঙ্কা সবার মনেই । তাই সহজেই তুষারের মৃত্যুর শোক অতিক্রম করে নিজেদের বেঁচে থাকা নিয়ে একটা নিদারুণ আশঙ্কার আলোচনায় গোটা আড্ডাটা মোড় নিতে থাকে 

 আসলে সময়টাই খারাপ । মানুষের জীবনের আজকাল আর কোন গ্যরেন্টি নেই’ শ্যামা মুখুজ্জে কিছুক্ষণ নীরবতার পর আবার বলে ওঠে । ‘আগেকার দিনে লোকে আশি পঁচাশি অব্দি বেঁচে থাকতো । এখন ষাট পেরলেই...

আজকাল সবে ভেজাল । চারিদিকে দূষণ !  খাবারে বিষ, জলে বিষ, বাতাসে বিষ। কি করে মানুষ ভালো থাকবে।’

তাই তো, বিষ খাচ্ছি, বিষ টানছি । সারা দেশ ধোঁয়ায় ধুলোয় আর প্লাস্টিক আবর্জনায় ভরে উঠেছে । এই অবস্থায় বেঁচে থাকাই দুর্দায় এবার মনিময় ঘোষাল উত্তর দেয় মানুষের এই অকালে অযাচিত মৃত্যুর কারণ হিসাবে যুগের হাওয়াকে দাঁড় করাতে পেরে একটু যেন ভারমুক্তই হন । আসলে বুকের ভারটা কোনোভাবে একটু কমানোর জন্য ভেতরটা আঁকুপাঁকু করছে অনেকক্ষণ ধরেই । একটা অদ্ভুদরকমের অস্বস্তি সজোরে চেপে ধরছে ।  এই তো কালকেও তুষার পাশে বসেছিল, এই আড্ডাতেই, এই বেঞ্চেই । রাজনীতি নিয়ে জোর তর্ক করছিলো । বর্তমান শাসক দলের মুণ্ডপাত করছিল হাত-পা নেড়ে । আর আজ সেই লোকটাই নেই । মাত্র চব্বিশ ঘণ্টা । সকালে তুষারের দুঃসংবাদটা পাওয়ার পর থেকেই ভেতরটা মুচড়ে মুচড়ে উঠছিল । সারাদিন বাড়ির মধ্যেই ছিলেন  মনটা বিষণ্ণ । বিকাল নামতে বিষণ্ণতাটা আরও বেশি করে জাপটে ধরছিল । ঘরের বাতাসটাও যেন গুমোট হয়ে বুকে লাগছিল, তাই এই আড্ডায় আসা নাহলে আজকে বেরোনার তেমন ইচ্ছে ছিল না । বন্ধুদের মাঝে এসে একটু যদি মনটা হালাকা হয় । কিন্তু হালকা হচ্ছে না বরঞ্চ আরও ভারী হয়ে উঠছে । শোককে ছাপিয়ে উঠেও একটা অজানা আশঙ্কা বড় বেশি করে প্রকট হয়ে উঠছে ।  বন্ধুদের দুশ্চিন্তার কথা শুনতে শুনতে নিজের মনেও জমছে অনিবার্য ভয় । মৃত্যুভয় !

একসময় বয়েস ছিল, রক্তের জোর ছিল । এখন বয়স হয়েছে, রক্তের জোর কমেছে । শরীরের কল-কব্জায় এসেছে শিথিলতা, মনের জোর কমেছে অনেকটা । আর পাল্লা দিয়ে বেড়েছে শরীর নিয়ে দুশ্চিন্তা করার ক্ষমতা । জীবন শেষ হয়ে আসছে বলেই কি মৃত্যুকে এতো ভয় ! ষাট-বাষট্টি বছর বয়েসটা মরে যাওয়ার বয়েস নয় । জীবনের অনেক দায়িত্ব কর্তব্য তখনও অসম্পূর্ণ । সে অবস্থায় চলে যেতে কেই বা চায়। তবু প্রতিনিয়তই চারিদিকে এই অযাচিত মৃত্যুমিছিল ।

                মানুষের সাথে দেখা হলেই আগে শরীরের খবর । সবাই আশঙ্কিত, কারোরই যেন শরীর ভালো নেই । চারিদিকে বড় বড় বিজ্ঞাপনেও শুধু আসুস্থতার কথা । ঝাঁ-চকচকে নার্সিংহোমের বিজ্ঞাপন । কোথাও ‘চার ইঞ্চি কেটে বাইপাস’ করার দুর্নিবার হাতছানি  কোথাও বা দগদগে লাল হৃদযন্ত্রকে টাটকা গোলাপের মতো ধরে রেখে ডাক্তারবাবুর বিশ্বস্ত হাতের ঝলকানি । রাস্তাঘাটে চোখে পরে সবারই । দেখে দেখে ভয় হয় । আশ্বাসের আড়ালে আশঙ্কাটাই বড় হয়ে ওঠে । কতশত নার্সিংহোম গজিয়ে উঠছে দিকে দিকে । কত তাদের রমরমা । কাগজে- টিভিতে বিজ্ঞাপনে বিজ্ঞাপনে ছয়লাপ । আসলে মানুষের শরীর যে সত্যিই বিপন্ন এবং যেকোনো মুহূর্তেই যে কারোর কিছু একটা হয়ে যেতে পারে সেই শনি সঙ্কেতই বারবার জানান দিয়ে যায় ।  এই আড্ডাতেই কতবার কত আলোচনা হয়েছে । কোন নার্সিংহোমের পরিষেবা ভালো, কারা চার্জ বেশি নেয়, কোথায় জীবনের গ্যারেন্টি, কার কোন আত্মীয় কতদিন কোথায় ভর্তি ছিল –  হাজারো কচকচানি । এসব আলোচনার অগোচরে আসলে জীবনের বিপন্নতার কথাটাই বেশি ফুটে ওঠে । এমনই এক বিপন্নতা যাকে কোনভাবেই অতিক্রম করা যায় না । প্রতি মুহূর্তে মনে হয় এই বুঝি তার নিজেরই কিছু হয়ে গেল । তুষারের মতই আচমকা বুঝি তার নিজের হৃদযন্ত্রটাও থেমে গেল ।


আড্ডাটা আজ আর বেশিক্ষণ চলল না । সন্ধ্যা ঘনানোর মুখেই ভেঙে গেল । বুকের প্রছন্ন তোলপাড় নিয়েই সকলে প্রায় নিঃশব্দে বিদায় নিল । বাড়ি ফেরার পথে মনিময় বাবু মুহূর্তের জন্যও স্থির হতে পারলেন না । বারবার মনের ভেতর কি যেন একটা আতঙ্ক চমকে চমকে গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠছে ।
আজকের ওয়েদারটাও খুব গুমোট । চাপা থমথমে । হাওয়া বইছে না একদম । ঘরে ঘরে অদ্ভুত রকমের স্তব্ধতা । শুধু তুষারের বাড়ির ওদিক থেকে মাঝে মধ্যে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে । আর বুকের শূন্য নালিপথের অলিগিলিতে সেই আওয়াজ পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠছে । শ্মশানযাত্রীরা বডি নিয়ে চলে গেছে একটু আগেই । মনিময় বাবু দুপুরের দিকে একবার গিয়েছিলেন বন্ধুকে শেষবারের মতো দেখতে । বেশিক্ষন থাকতে পারেননি । তুলসি পাতায় ঢেকে দেওয়া তুষারের চোখদুটোর দিকে তাকাতে গিয়ে বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠেছিল । মাথার পাশে জ্বালানো একগুচ্ছ ধূপের ধোঁয়া কুণ্ডলী পাকিয়ে শ্বাসরোধ করে দিচ্ছিল ।   সারাদিনের এই দমবন্ধ পরিবেশটা সন্ধে হতেও কাটল না । অন্ধকার নামার সাথে সাথে যেন অস্বস্তিটা আরও বেশি করে চেপে ধরছে ।  


বাড়ি ফিরেও অস্থির মনটাকে শান্ত করতে পারলেন না তিনি ।  অভ্যাসমত হাত-পা ধুয়ে পোশাক বদলে যখন নিজের ঘরে ঢুকলেন তখন পাশের ঘর থেকে স্ত্রীর গলা শুনতে পেলেন । ফোনে মেয়ের সাথে কথা হচ্ছে । মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে । এলাকায় তুষার কাকু মারা গেছে এ দুসংবাদটা দেওয়ার মধ্য দিয়ে মনের ভার লাঘবের চেষ্টা করছে গিন্নী । রোজই মেয়েকে ফোন করা অভ্যাস । একটা মেয়ে, দূরে শ্বশুরবাড়ি বলে ব্যগ্রতা আরও বেশি । বাক্যালাপের শেষের কয়েকটা কথা কানে এলো মনিময় বাবুর । তোর বাবারও তো বয়স হচ্ছে । আমার কি চিন্তা হয় । চারিদিকে যা সব হচ্ছে।’ নিজের ঘরে বসে কথাগুলো শুনতে পেলেন তিনি । দুম করে কেউ যেন হাতুড়ি পিটে দিল বুকে ।

অনেক রাত অব্দি ঘুমানোর চেষ্টা করলেন মনিময় বাবু কিন্তু পারলেন না   নিরন্তর দুশ্চিন্তা মনকে বারবার বিক্ষিপ্ত করে দিচ্ছে । যতই টেনশান ফ্রি থাকার চেষ্টা করুন না কেন, উদ্বেগ জিনিশটা আপনা আপনিই চলে আসছে । তুষারের মতো আচমকাই তার জীবনেও ঘনিয়ে আসবে নাতো চরম মুহূর্ত । ইদানীং মাঝে মাঝে নিজের শরীরটাও দুর্বল লাগে । সকালে মর্নিংওয়াক করতে বেরুলে মাথা ঘুরে যায় । প্রেসারটা কদিন আগেই চেক করিয়েছেন তবু ভয় হয় আবার বাড়ল নাকি । কাজল মিত্তির প্রায়ই বলে একবার ইসিজি করিয়ে রাখতে । দিন কয়েকের মধ্যেই করিয়ে নিতে হবে । গোটা শরীরটা যন্ত্রে ফেলে দেখে নেওয়া দরকার কোথাও কোন রোগ-ব্যাধি লুকিয়ে বাসা বেঁধে রইল কিনা । রাশি রাশি ভাবনারা মাথায় ঝেঁকে ধরে মনিময়বাবুর । ডাক্তারবাবু পই পই করে বলেন একদম দুশ্চিন্তা না করতে, তবু চিন্তার জাল বাধা মানে না ।  বিছানায় শুয়ে ছটফট করেন তিনি । চোখ বুজতে পারছেন না । সদ্য মারা গেছে কাছের বন্ধু । কি করে আজ রাতে চোখে ঘুম আসবে মনিময় ঘোষালদেরশুধু আকাশ পাতাল দুশ্চিন্তার ঝড় বইছে মাথায় ।  আর দুশ্চিন্তার কালো হাত ধরেই একটা আচমকা অ্যাটাক  কখন যে ঘাতক হয়ে উঠছে খেয়াল করছে না কেউই । খুব তাড়াতাড়িই এলাকায় আবার হয়তো তুষার দত্তের মতো কারো একজনের স্ট্রোক হবে ।

বনশ্রী রায় দাস - এর কবিতা

ফুড়ুৎ

       
ক্লান্তিহীন তুমি পার করেছো সাতাশ বসন্ত 
পঞ্জিকা উলটাতে থাকি কোথায় মাহেন্দ্রক্ষণ?
গ্রহণ চাঁদের ঘরে তোমার  হেঁটে যাওয়া
জলছাপটুকু গড়িয়ে পড়ছে 
জানু বেয়ে পায়ের পাতায়।
টুকরো মেঘে   লিখে দাও প্রেম- লিপি
সুন্দর হস্তাক্ষরে গুচ্ছ গুচ্ছ মুক্তো-কণা!


সাতাশ বসন্ত আমি ও গ্রহণ কাল চটকে
কলঙ্ক তিলের নাড়ু বানিয়েছি আহ্লাদে ।
নদী ভিজেছে উপহাসের রাতে,
বুঝতে পারছি না আজ ও সেই ভাবে 
ভালোবাসা বাঁচে কিনা ,নিঃস্বার্থ।
শুনেছি ভালোবাসাথে নাকি পাখির জাত
অনুভব করতে হয় দূর থেকে 
ছুঁয়ে দেখতে চাইলেই ফুড়ুৎ।



উদযাপন 



এত কাছে শ্বাসবায়ুর শীতলতা 
পাশটিতে বসি  জুতসই ,
গল্পগুলো গাছ হলে প্রেমিক হয় মেঘলা বিকেল ।
ধককরে উঠলো ভেতরটা ,তোমার চোখে 
ব্রহ্মাণ্ডের ছবি ,সেই অজান্ত-ইলোরার  
ভাষা সুখের কথা  বলে।
কালিদাসের পদাবলী উপকথায় হৃদি-ঝোরার উৎসমুখ।গ্রীবা তোলে মরুভূমি- জাহাজ  ,
জলে নৌকো ভাসাতে চেয়ে  
পিপাসা প্রণয়ী অরণ্য ভূমি ।
খসে পড়া মৃত্যু- পরীর হাঁমুখ গলে
আবার ও নবজেন্মর বৃক্ষ-ধরলো কদম-কুঁড়ি ।

              

 অসুখ

    

হে জনগণমন ঈশ্বর হিংসার গরলে জ্বলছে
শতাব্দীর বোতাম খোলা আদমসুমারি,
অন্ধকার উল্লাসে অন্তর্গত কামনা বাসনার 
রক্তাল্পতায় ভোগেন ভাষা- ঈশ্বরী।


    

  দুহিতা 

         


মূহুর্তের সহজ উপমা আঁকলে উছলে পড়ে নাভিপদ্ম,
অন্ধকারের সুচাগ্র বোধটিও অস্পষ্ট হয়।
নাড়ি ছেঁড়া আলোর  কণা নীড়-বাঁধে জল-শরীরে,
সতর্ক রশি দিয়ে তুলেছি তাকে রক্ত- গানে।
সে তরঙ্গ আমার । বুকের পালকে উষ্ণতার ওম্।
আমাকে শেখায় কিভাবে ভালোবাসার নিপুণ 
শৈলী উন্মুক্ত করে সারস্বত- অলংকার 


অষ্টবসুর আলো ,জীবন নক্ষত্র, সেই স্নেহ-সোহাগ 
তরলে ডুবে দিয়ে আমার মুক্তিস্নান!!


 নির্বাসন

      

এই তো বেশ আছি নির্বাসনে
আশ্বিনের মেঘ-স্রোতে ঢেউ ভাঙছে সমুদ্র ।
রোদের আলজিভ ছুঁয়ে চিলের উড়ান ,
শহুরে ভিড়ে মিশে যাচ্ছে 
কালো বিড়ালের চোখ ,ক্রমশ 
ছমছমে গলিপথের দিকে-----
শোকের কান্নায় কেউ আঁকছেন 
পরবর্তী কাব্যগ্রেন্থর প্রচ্ছদ ।
উলঙ্গ শ্যামার চোখের জলে 
ভিজে যায় রামপ্রসাদী-বেড়া।